Saturday, July 23, 2016

'জারজ' শব্দের সোজা বাংলা অর্থ যার পিতৃপরিচয় নেই/অবৈধ সন্তান । মানে কোন নারী পুরুষ বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক করার পরে যদি কোন সন্তান নারীর গর্ভে আসে তাকে জারজ বলে ।কোন পুরুষের বীর্য ছারা নারীর গর্ভে সন্তান আসা সম্ভব নয় । যদি আসে তবে সে যীশু মত ইশ্বরের পুত্র রুপে গন্য হবে । সাধারণত আমাদের সমাজে যেসব শিশুকে জারজ বলা হয় ,তারা জন্মের পর তাদের কোন খোঁজ খবর বীর্য প্রদানকারী পুরুষটি নেন না । সেই সন্তানের জন্মদাতা মাতা সেই সন্তান পেটে আসার পর থেকে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে অসতী ট্যাগ খেতে হয় । সেই সন্তান কে ধরা ছোঁয়া বা তার সাথে উঠা বসা, খেলা ধুলা, কোন পিতার সার্টিফিকেটধারী সন্তানদের করতে দেয়া হয় না ।তারা অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ । যেই পিতা তার সন্তানকে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিতে পারে না , তার পিতা হওয়া থেকে না হওয়াই ভাল । কিন্তু সমাজের সকল ক্ষেত্রে জারজ শব্দটিকে খুব ঘৃণার চোখে দেখা হয় । যেহেতু পিতার পেটে সন্তান ধারণ করেনা , তাই আলটিমেটলি এই গালিটা মায়ের উপর যায় ।
মানুষ কতটা স্বার্থপর আমি ভেবে অবাক হই । তারা মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে আরেকজন মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া সন্তান কে জারজ বলে । আমার একজন মুক্তমনা বন্ধু সেদিন বলছিলেন, আমি রাজাকার কে জারজ গালি দেই । রাজাকারকে আপনি জারজ গালি দিচ্ছেন আর সেই রাজাকারের বাচ্ছারা বা কোন ধার্মিক মুমিন আপনাকে নাস্তিক হওয়ার জন্য জারজ বলে গালি দিল । তবে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? ব্যাপারটা দাঁড়ালো আপনার মা আর রাজাকার মা অসতী , মানে আপনার পিতৃপরিচয় নাই তারো নাই । দোষ কার ? আপনার নাকি আপনার মায়ের ? কোন মাই জানেন না তার সন্তান খারাপ হবেন নাকি ভাল হবেন । কেউ কেউ পরিবেশ সমাজ কুসংস্কার ইত্যাদির কারণে চরম খারাপ পথে যায় । যে যায় তার বিচার প্রাপ্য কিতু সেজন্য মা কে উদ্যেশ্য করে কাউকে জারজ গালি দেয়া নারী জাতির প্রতি হেয়ভাব ও বিদ্বেষ লালন করারই বহিঃপ্রকাশ ।
'জারজ' শব্দটি স্রেফ একটি পুরুষতান্ত্রিক গালি । যে অপরাধ নিজেরা করে দোষ চাপায় নারীর উপর ও তার গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া সন্তানের উপর । চুরি তার উপর সিনাজুড়ি একেই বলে । আমরা যারা শুভবোধ এর চর্চা করি, সমাজের কু-প্রথার সংস্কার চাই, তাদের উচিত জারজ/বেশ্যা এসব নারী বিদ্বেষী গালি থেকে বের হয়ে আসা । সমাজের আমজনতা এসব প্র্যাকটিস করে । আমাদের উচিৎ তাদের কে শুধরানো , আমরা যদি নিজেরাই এসব শব্দ গালি হিসেবে ব্যবহার করি তবে তারা আর কি করবে !? সর্বোপরি আমিও মানুষ, আর যার পিতৃপরিচয় নেই সেও মানুষ । আমি যেভাবে জন্ম নিয়েছি সেও ঠিক একি ভাবে জন্ম নিয়েছে । আমি যেভাবে খাই ধাই চলাফেরা করি সেও তাই করে । তবে আমি সাধু আর সে অসাধু হয় কি করে ?
কারো অপরাধের ভার অন্যের উপর দিয়ে কি নিজেরা খুব ভাল সাজা যায় ? যায় না , সমাজ জানে কে অপরাধী । কিন্তু দোষ চাপায় নারীর উপর । যত গলদ নারীকে বয়ে চলতে হয় ,যত বিষ নারিকেই গিলতে হয় । ভয়ঙ্কর নারীবিদ্বেষী সমাজ এসব গালিকে তেল পানি দিয়ে লালন করে নিজেদের অপরাধের ভার নারীর উপর ফেলার জন্য এসব শব্দ নারীর ক্ষেত্রেই এপ্লাই করে । যা আমাদের সকলেরি চরম ভাবে পরিত্যাগ করা উচিত ।https://www.facebook.com/who.annopurnadebi/posts/1609339699333238

No comments:

Post a Comment