কবিতা এক:
এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় ততো চাই আরও!
ইহাদের অতি লোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয় এক পেয়ে সুখী নয় যাচে বহুজন।
এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় ততো চাই আরও!
ইহাদের অতি লোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয় এক পেয়ে সুখী নয় যাচে বহুজন।
কবিতা দুই:
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও পরিবারে বেড়ে উঠা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষের কাছে এই কবিতা গুলো খুব পরিচিত। নারীর প্রতি বিদ্বেষ হিংসা ও ঘৃণা প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা পূজারিণী কবিতার এই অংশটাকে কপি পেস্ট করি। আর যখনি সাম্যের গান গাইতে হয় আসে তখন নারী কবিতার উপরোক্ত অংশ কপি পেস্ট করি। এগুলো যে কতোটুকু পরস্পর বিরোধী বক্তব্য সেগুলো একবারও ভেবে দেখি না। প্রেম প্রকাশে আরও দুটো লাইন বহুল প্রচলিত, '“তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখেছ কি তার প্রাণ, ভিতরে তার মমতাজ নারী, বাহিরে শাহজাহান”। এখানে শাহজাহানের হেরেমখানা বা বহুবিবাহ, তার নিষ্ঠুরতার কথা আড়ালই থাকে। সবাই জানে শাহজাহান কত্ত মস্ত বড় প্রেমিকই না ছিলেন।
সাদা চোখে কবির কবিতা বিচার করতে আমরা যাই না। কারণ কবি এখানে বিখ্যাত, আমাদের জাতীয় কবি। কোন মানুষ যখন বিখ্যাত হয়ে যায় তখন তার সব রচনাই এভাবেই সমাদৃত হয়। যারা নিতে পারে না তারাই ব্যতিক্রম। তারাই মাথা খাটিয়ে ভাল মন্দ বিচার করে। কিন্তু উক্ত কবির জীবনী দিয়ে আমরা তাঁর কবিতা বিচার করি না। একারণে যারা কবির শোভাকাংখী তাদের ব্যক্তি-আক্রমণ মূলক কথা বলে বিরুদ্ধাচরণ করে বা কবির অনুরাগী ভক্ত পাঠকদের কবির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জায়গায় গিয়ে অশ্লীল, কুৎসিত, যুক্তিহীন ট্যাগ ছুঁড়ে দেই না। কিন্তু তসলিমা নাসরিনকে বিবেচনায় তাঁর সমর্থক বলেন আর তাঁর ভক্ত বলেন অথবা তাঁর অনুরাগী পাঠক বলেন, তসলিমার মত বিখ্যাত ব্যক্তির নাগাল না পেয়ে তাদের বাল ধরে টানাটানি করেন। ধরেই নিয়েছেন তসলিমা আপনাদের বাপের সম্পত্তি, তাকে নিয়ে আমরা যা ইচ্ছা তা বলব, করব, কে আসবে বলার তারও জাত উদ্ধার করবো এবং করছেনও। এখানে কি আরও স্পষ্ট করে বলতে হবে তসলিমা কে আপনি লিঙ্গ-দিয়ে বিচার করছেন নাকি তাঁর লেখা দিয়ে?
সব পুরুষের ভেতরেই নারী বিদ্বেষ বিদ্যমান, কারোর কম কারোর বেশি। আমাদের সমাজ আর ধর্ম এগুলোই শিক্ষা দেয়। যৌবনে প্রেম করা অবস্থায় সেটা কিছুটা কমে গেলেও বা তারা কম বেশি নারীবাদী হলেও পুরুষ নামক প্রতিষ্ঠিত মুল্লুকে আঘাত করে কোন কথা আসলেই তাদের আসল রূপটা বেরিয়ে আসে। নারী আর তার তার প্রতিনিয়ত ঘটা অন্যায় নিয়ে লেখালেখি করলেই আপনি যদি নিজেকে নারীবাদী ভেবে বসে থাকেন, সেটা যে ভুল তা আপনার নিজের চেয়ে ভাল আর অন্য কেউ জানে না। কারণ আপনার গড়া নারীবাদের বাইরে কোন নারী যাইতে চাইলেই তাকে লেখালেখির সীমা সহ সমস্ত ক্ষেত্রে, এমনকি// ''নারীবাদীতা'' শব্দেও নারীরা নারীকে জাস্ট পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে, তারা আসলে মানুষ হতে পারেনি// এসব বিচারটা আপনি করে ফেলছেন। আপনার মত চোখ কান হাত পা মুখ থাকার পরও নারীকে আপনি যে মানুষ না ভেবেই বিচারক সেজে বসে আছেন! কতোটা ভয়ঙ্কর আপনার চিন্তা! নিজেকে নারী জাতির জন্য খুব কল্যাণকর ভাবছেন? মূর্খরাও ভাল; আপনার মত অশিক্ষিতরাই কালে কালে নারীর পথ রোধ করে পুরুষতন্ত্র টিকিয়ে রেখেছে। আপনারা খুব ভাল করে জানেন কিভাবে না মেরেও নারী কে পঙ্গু করা যায়, আপনারা জানেন কিভাবে নারী পুরুষ সবাইকে কাঁচকলা খাইয়ে নিজের নামে নারীবাদের কৃতিত্ব লিখিয়ে নেওয়া যায় এবং কি কি করলে নারী মানুষ হওয়ার যোগ্যতা পায়।
No comments:
Post a Comment