আমি যখন পুরুষের বিরুদ্ধে কোন বিষয়ে পোস্ট দেই তখন কোন নারীবিদ্বেষী পুরুষকে আমার ডাকতে হয় না, তারা আপনি এসে কমেন্ট-বক্সে পরিচয়টা দিয়ে যায়। এটা নতুন নয়। মেয়ে আইডিগুলো কমেন্ট-বক্স উন্মুক্ত রাখতে পারে না, ভয়টা কিন্তু মেয়েদেরকে নিয়ে নয়, ভয়টা পুরুষ নামক বিচীওয়ালাদের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য । বলতে পারেন পুরুষেরাও কমেন্ট-বক্স উন্মুক্ত রাখতে পারে না। হ্যাঁ পুরুষেরাও পারে না, ভয়টা সেই একি জায়গায়, কমেন্ট বক্সে মা বোন বউকে নিয়ে টানা হ্যাঁচরা করে নারীবান্ধব পুরুষের দল। এখানে তন্ত্র না বলে পুরুষ বললে কারো যন্ত্রে আঘাত লাগলে আমার কিছু করার নেই।
নারী বিরুদ্ধে পুরুষের অত্যাচারী ধর্ষকামী মনোভাব বোঝার জন্য তত্ত্বকথা পড়তে হয় না, চোখ থাকলে--আর নিজের ঘরে নারী থাকলেই এটা স্পষ্ট বোঝার কথা। আর এখন অনলাইনের সুবাদে কমেন্ট বক্স সেটা জানার সুযোগ পুরোপুরি করে দেয়। তার পরও আপনি যদি চোখে পট্টি পরা স্বেচ্ছা অন্ধ লোক হওন, তবে ধরে নিতে হবে আপনিও তাদের একজন।
প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়, শিল্পী লেখক সাহিত্যিকদের লিঙ্গ পরিচয় বড় কথা নয়, তাদের সৃষ্টিই বড়। কথাটা আমি মানি, আপনি মানেন কিনা সেখানে আমার সন্দেহ আছে। কারণ একজন শিল্পী কে নারী বলে পুরুষেরা চাইলেই ছুদে দিতে পারে, ইন-বক্স আউট-বক্স বা পাবলিক প্লেসে। একজন পুরুষ শিল্পীকে কোন নারী আজ পর্যন্ত ছুদতে যায়নি। কেন? যায় তো নি-ই, এমনকি কোন নারী শিল্পী যদি কোন পুরুষ শিল্পী কে নিয়ে সমালোচনা করে, তবে উক্ত নারী শিল্পীকে কটাক্ষ করে তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা সহ গভীরতা মাপার জন্য ইঞ্চি টেপ আমাদের আঙ্গুলচ্যুত হয় না। কেন?
লেখক কবি সাহিত্যিকের সমালোচনা অত্যন্ত সাধারণ বিষয়। সবাই সব মত গ্রহণ করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে তসলিমা নাসরিন সমালোচনার সবচেয়ে উপাদেয় উপাদান সেটা আমরা জানি। তিনি সরাসরি পুরুষতন্ত্র সহ পুরুষকে আক্রমণ করে কথা বলেন বলে, তার বক্তব্য হজম করতে কম বেশি সবারই কষ্ট হয়। তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে আপনি সমালোচনা করতে পারবেন ভাল কথা, তসলিমা নাসরিন কাউকে 'পুরুষ' বলে সমালোচনা করলে আপনি সেটা নিতে তো পারবেনই না, উল্টো সে কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার থেকে ছোট, আপনার থেকে অযোগ্য বা সারাজীবন চেষ্টা করলেও আপনার মত একখান উপন্যাস বা কবিতা লিখতে পারবে না, সেই নিশ্চয়তাও আপনি তাকে দিয়ে দিচ্ছেন। কেন আপনি তসলিমার সমালোচনার যোগ্যতা রাখেন, আর তসলিমা নাসরিন কেন আপনার মত বিখ্যাত কোন পুরুষের সমালোচনা করতে পারবে না? আপনি তসলিমা নাসরিনের সীমানাটা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন, কেন বলুন তো? কোন সাহসে? কারণ সে নারী লেখিকা আর সে আপনাকে 'পুরুষ' বলে কিছু কড়া কথা বলে কটাক্ষ করেছে। এখানে আপনি তাকে 'নারী' বলে উল্লেখ না করলেও আপনার আচরণই বুঝিয়ে দিচ্ছে আপনার স্পর্ধার কারণ।
তসলিমা নাসরিন অবিবেচকের মত কথা বলেছেন, আলোচনা উস্কে দিচ্ছেন, অশ্লীল লিখেছেন, ফালতু লিখেছেন, এটা নতুন নয়। আজকে আবার নতুন করে উল্লেখিত হয়েছে, কারণ তিনি এমন একজনকে নিয়ে লিখেছেন যিনি আবার আপনার পছন্দের কবি-লেখক-শিল্পী। এজন্য আপনি তার সমালোচনা করে যা ইচ্ছে তাই বলে নারীবাদ আর পুরুষ বিদ্বেষের সীমারেখা দেখিয়ে দিচ্ছেন। আপনি তাকে নতুন করে নারীবাদ শেখাচ্ছেন। কিন্তু আপনি ভাবছেন না, আপনার মত একই ভাবে উক্ত লেখক-কবি-শিল্পী কে তসলিমার ভাল না লাগতে পারে, তার মাঝে সে নারীবিদ্বেষ দেখতে পারেন, সীমাবদ্ধতা দেখতে পারেন, উক্ত লেখক-কবি-সাহিত্যিকের লেখা তার অপছন্দ হতে পারে; এটা কেন মানতে পারছেন না? আপনি কিন্তু নারীবাদ আর পুরুষবিদ্বেষ নতুন করে বোঝাতে গিয়ে আপনার সুপ্ত নারী-বিদ্বেষটাই দেখাচ্ছেন! বুঝতেছেন না? আরেকবার পড়েন।
শুরুতে ফিরে যাই। নারীর বিরুদ্ধে পুরুষতন্ত্র দিনের আলোর মত স্বচ্ছ হলেও, এটা গ্রহনযোগ্য; এটা আমাদের দৃষ্টিতে কোনভাবেই নারী বিদ্বেষ নয়। কিন্তু পুরুষত্বন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীবাদ ফুলকির মতো জ্বললেও, ওটা অগ্রহনযোগ্য, কারণ এটা পুরুষবিদ্বেষ। নারীবিদ্বেষ হয়েছে, হচ্ছে, হবে----কিন্তু পুরুষতন্ত্র তথা পুরুষের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তা পুরুষবিদ্বেষ উপাধি পাবে, আর পুরুষবিদ্বেষটা কোন ভাবেই সহী বিদ্বেষ নয়। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সহী, সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে প্রয়োগকৃত বিদ্বেষ নারী বিদ্বেষ। বিদ্বেষের প্রতিযোগীতায় এক্ষেত্রে পুরুষেরা বরাবরই পরাজিত থাকতে পছন্দ করে।
দ্রঃ তনার পক্ষে যদি আমি মুখ খুলি আপনারা আমাকে তনাদ্ধ, মুরিদ, উম্মত, চ্যালা অনেক কিছুই উপাধি দিবেন। আপনারাও একই ভাবে কারোর পক্ষে বলতে গিয়ে তনার বিরুদ্ধাচারণ করছেন, আপনিও কি ত্যানার অন্ধ, মুরিদ, উম্মত অথবা চ্যালা?
No comments:
Post a Comment