কোন ছেলে ভালো রান্না করতে জানে বা অমুকের স্বামী স্ত্রীকে রান্না করে খাওয়ায়, এই কথা পরিবারের সদস্যরা বড় গর্বের সাথে বলে, 'মুন্না তো রান্না পারে'। এতো কাল যাবত মেয়েরা রান্না করে পুরুষদের খাওয়াচ্ছে সেটা কারোর কাছেই তেমন কোন গর্ব করার মত বিষয় না। বরং রান্নার ভুল ধরার জন্য সকলেই উৎসুক থাকে। কোন মেয়ে যদি রান্না করে তবে তাকে নিজের পছন্দের চেয়ে ফ্যামিলির অন্যদের রুচি পছন্দ এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে তাকে রান্না করতে হয়। মেয়েদের সবসময় এই ভয়ে তটস্থ থাকতে হয়, তরকারিতে তেল, নুন, মশলা ঠিক আছে কিনা। প্রতিদিনের রান্নায় একই ভয়, যদি খেতে ভালো না হয় তবে কপালে জুটবে ধিক্কার, তিরস্কার। মেয়ে হলে জন্মালে রান্না ভালো হতেই হবে। এ যেন অবিনশ্বর নিয়ম। মেয়েরা প্রায় প্রতিদিন রান্নার পর জিজ্ঞাস করে খাবার কেমন হলও? এতে করে ভালোবেসে খাইয়ে তৃপ্তি পাওয়ার চেয়ে বেশি কাজ করে তিরস্কার পাওয়ার ভয়।
জগতে কত শত সাকসেস থাকলেও রান্না ভালো না হলে মেয়েদের সব সাকসেস জলাঞ্জলি যায় লোকের তিরস্কারে। পুরুষের ডিম ভাজি, ভাত টাইপের রান্না বা শেফ হলে দেশী বিদেশী কোন খাবার রান্নাকে অনেকেই গর্বের চোখে দেখে। কিন্তু তা যদি হয় কেবল এক দুই দিনের জন্য। কন্টিনিউয়াস পুরুষেরা বাসায় রান্না করাটা আমাদের কাছে খুব বেমানান। কারণ রান্নার কাজটা আপাত দৃষ্টিতে পুরুষের জন্য অপমানজনক। মেয়েদের কাজ পুরুষেরা করলে তা অপমানজনক, কিন্তু পুরুষের কাজ, যেমন-বাঁচার জন্য রেঁধে খাওয়ানোটা মেয়েরা না করলে সেটা হয় মেয়েদের জন্য অপমানজনক। কোন মেয়ে সংসারী অবস্থায় এই দায়িত্ব স্বেচ্ছায় না নিতে চাইলে তাকে সংসার করার যোগ্যতাও হারাতে হতে পারে। তখন সেটা হয়ে উঠে টিকে থাকার লড়াই, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সমাজের হায়েনাবেশী পুরুষের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেয়ে রান্না ভালো করে পরিবারের সবার মন জয় করে টিকে থাকাটাকেই তারা সহজ বলে মেনে নিয়েছে। রান্না ভালো না করে এই তিরস্কারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তাটা তারা খুঁজে না। এক ধরনের স্বার্থপর পঙ্গু অব্যবহৃত মস্তিষ্ক নিয়ে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম কোনরকমে টিকে বাঁচতে পারলেই খুশি। এভাবে অনেক আত্মনির্ভরশীল মেয়েও ব্যক্তিত্বহীন পরগাছাতে রূপান্তরিত হয়।
একটা মেয়ে শ্বশুর শাশুড়ির সাথে কথা বলা অবস্থায়, তার মোবাইলে ফোন আসলে যদি সে বলল, 'মা আমার একটা ফোন এসেছে-আমি একটু পরে আসছি'। তখন শ্বশুর শাশুড়ির মুখ ম্লান হয়ে যায়। যতোটা না কষ্ট পায় পর্দার শ্বশুর শাশুড়ি তার চেয়ে কষ্ট পায় টিভির দর্শক। কত বেয়াদব মেয়েরে ভাই, ফোনে কথা বলার জন্য জরুরী কথা ছেড়ে উঠে গেলো। ফোন কলটি যদি মেয়েটির স্বামীর হতো, তবে ভেবে নেওয়া হতো অবশ্যই কোন জরুরী কল ছিল। হয়তো ব্যবসা বা অফিসের কোন জরুরী কাজে পুত্রধন উঠে গেছে। সমস্ত বিষয়ে আগে নিজের ইচ্ছার চেয়ে ফ্যামিলির অন্যদের ইচ্ছার কথা ভেবে তাদের প্রতিটি একক পদক্ষেপ ফেলতে হয় প্রতিদিন প্রতিক্ষণ। দিন যত যাচ্ছে তার সাথে সাথে মেয়েদের ব্যক্তিস্বাধীনতা সহ মনের স্বাধীনতাও প্রতিনিয়ত বিসর্জন দিতে দিতে তারা এক অদ্ভুত বশ্যতার শিকার মানসিক প্রতিবন্ধী জাতিতে পরিণত হচ্ছে। এদেরকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ড্রাইভ করানো এজন্যই এতো সহজ।
বাংলাদেশে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়ি টুপি সম্বলিত ছেলে তেমন না দেখা গেলেও, হিজাব বোরকা-ধারী হাজারো মেয়ে দেখা যায়। স্কুল ড্রেসের সাথে একটা স্কার্ফ থাকে যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। ধর্ম এবং ধর্মের নিয়ম কানুন ছেলে মেয়ে উভয়ের পালনের দায়িত্ব থাকলেও ছেলেদের থেকে মেয়েরা ধর্মটা লালন পালন করে বেশি। মেয়েদের ধর্ম পালনটা সৃষ্টিকর্তাকে যতটা না খুশি করার জন্য, তার চেয়েও বেশি প্রয়োজনীয় সমাজ ও পরিবারের মানুষদের খুশি করানোর জন্য। নিজেকে বঞ্চিত রেখে অন্যকে ভালোবাসার নামে ভণ্ডামো করে, অন্যের ভালো লাগার জন্য-অন্যের চোখে ভালো হওয়ার জন্য- অন্যকে খুশি করার জন্য-নিজের চোখে নিজেকে না দেখে অন্যের চোখে নিজেকে দেখার মত বিষয় পোশাক-আশাক, ফার্নিচার জাতীয় বস্তু তে মানায়; মানুষে নয়। https://www.facebook.com/who.annopurnadebi/posts/1742137182720155?pnref=story
No comments:
Post a Comment