বাংলা ওয়াজে যখন মূর্তি ভাঙ্গার থ্রেট দেওয়া হয়, লোকে এগুলোকে পুণ্য জ্ঞান করে ধর্মের মহাত্মা ভেবে অন্তরে গেঁথে নেয়। বাংলা ওয়াজে যখন নাস্তিক হত্যার জন্য উস্কানি দেওয়া হয়, লোকে সেগুলোকেও ধর্ম রক্ষার জন্য আবশ্যিক করণীয় বলে অন্তরে গেঁথে নেয়। পরে সময় সুযোগ বুঝে পুণ্যের কাজটা তারা করে নেয়। কিন্তু স্বীকার করে না ইসলাম এসব অকাজ সমর্থন করে।
গতবছর নাস্তিকতার অভিযোগ এনে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে কতল বা মাথা কেটে হত্যার হুমকি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। আলেম সংঘটন কিছু থেকে কিছু হলেই কল্লা কাটার হুমকি ধমকি প্রকাশ্যেই দেয়। এগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোন রকমের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। আচ্ছা কওমী মাদ্রাসার পোলাপান বা আলেমগণ কি ইসলামের বাইরের কিছু?
আলেম ওলামা মোল্লা সহ সাধারণ মুসলিম আমজনতা সবাই সংখ্যালঘু নির্যাতন আর নাস্তিক হত্যার এইসব থ্রেটকে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবেই নেয়। হত্যার পরের জঙ্গি সংঘটনের স্বীকারোক্তির পরে বলে, দেশে কোনও জঙ্গি নাই, এইগুলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা ইসলাম এইসব হত্যা সমর্থন করে না। ইসলাম যা সমর্থন করে এবং তাই একমাত্র বৈধ যদি হয়, তবে তারা কেন এইসব থ্রেট ও খুনাখুনিকে ইসলামের নামে অপব্যাখ্যা বা ষড়যন্ত্র বলে মাঠে নামছে না? নাস্তিক হত্যা বা বিধর্মী হত্যার অথবা পেটানোর জন্য তারা ঠিকই লাঠি ব্যানার নিয়ে মাঠে নামছে। ধর্মের কি পারস্পরিক বৈপরীত্য!
এইসব কথা এইজন্যই বলা। আজ দেখলাম তসলিমা নাসরিনকে কেরালা থেকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট। বাংলাদেশ থেকেও ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা মৃত্যুর পরোয়ানা পেয়ে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন ২২ বছর আগে। আজও পরিস্থিতি একটুকু বদলায়নি। অনেকেই এই থ্রেটে বগল বাজিয়ে খুশি হচ্ছেন, যেমন হয়েছিলেন বাইশ বছর আগের বাঙ্গালি মুসলিম সমাজ। আজ তসলিমা নাসরিন কে হত্যা করা হলে বগল বাজানিওয়ালারাই বলবে, ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই, ইসলাম জঙ্গিবাদের নামে মানুষ হত্যা সমর্থন করে না, ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। আহা! শান্তির ছড়াছড়ি দেখতে দেখতে ক্লান্ত!
No comments:
Post a Comment