পৃথিবীর কোথাও মানুষ হত্যা হয়েছে, সেই হত্যার জন্য দায়ী যদি কোন মুসলিম হয় তবে আওয়াজ উঠে- ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুসলিমরা কখনো টেরোরিস্ট হয় না। এই হত্যার জন্য দায়ী যদি মুসলিম নাও হয়, তবুও আওয়াজ উঠে- ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুসলিমরা কখনো টেরোরিস্ট হয় না। এসব বলে, কয়ে, মেরে, কেটে, আদরে, আহ্লাদে, ইনিয়ে-বিনিয়ে তারা একটা কথাই বলতে চায় --পৃথিবী জুড়েই অশান্তির জয়জয়কার, একমাত্র শান্তির ছায়াতল ইসলাম; তোমরা দয়া করে ইসলামের ছায়াতলে আসো, এতেই কেবল শান্তি আর শান্তির দূতদের বসবাস।
সেদিন টিভির খবর দেখে লিখেছিলাম, গুলশানে জঙ্গিরা নারীদের উপর বীভৎস রূপে আক্রমণ করেছে। শান্তির ছাউয়েরা এসে ঘাউ ঘাউ করতেছিল, এই খবর নাকি আমি বানিয়েছি। ইসলামকে কলঙ্কিত করাই আমার লক্ষ্য। আজকের সমকালের খবর, তারিশি মৃত জেনেও তার সারা শরীরে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়েছে, তারা সারা শরীরে ৩০-৪০ টি আঘাতের চিহ্ন। যে দশজন নারী আর্টিজানে মারা গেছে তাদের সবাইকে অন্যদের থেকে বেশি আঘাত করা হয়েছে। অনাগত সন্তানের দোহাই দিয়েও রক্ষা পায়নি ইতালিয়ান সাত মাসের গর্ভবতী নারী মারিয়া বোরিলি। ঊটপুতেরা মানুষ বুঝে না শান্তি বুঝে। তাদের কথায় আচার আচরণে এমন একটা ভাব, জঙ্গিরা তাদের আপন মায়ের পেটের ভাই, এদের বিরুদ্ধে আমি অপপ্রচার চালিয়ে ইসলামের শান্তি নষ্ট করতেছি। তোদের লজ্জা করে না? হারামীর জাত-- মানুষ মারোস আবার শান্তি শান্তি বলে কাউ কাউ করস! আরে তোদের শান্তি আমি কি নষ্ট করব, তোদের জাত ধর্মের ভাই ব্রাদাররাই শান্তিকে ধরে তোদের বাপেদের পেছন দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ছুদির ইসলামের রক্তের ভাউ ব্রাদারদের পারলে কে কিছু বল, তারা তোদের শান্তিকে কেন অশান্তি বানাচ্ছে?
কাল রাতে প্যারিসে আবার একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেল। সেজন্য সেদেশের প্রেসিডেন্ট বলেছে, ''এশার নামাজ না পরে যারা বেপর্দা হয়ে, মদ খেয়ে রাস্তায় উৎসব করতে নামে, তাদের এমন পরিণতি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। পুলিশি তদন্ততে এসেছে, সে রাস্তায় কিছু নাস্তিক ব্লগার ছিল। তারা পর্ণ লেখালেখি করতো বিধায় তাদের মৃত্যুতে এতো শোকের কিছু নেই। তাছাড়া জাতীয় উৎসবে রাস্তায় নামা ফ্রান্সের লোকজনের একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রাইভার মুসলিম হলেও তার ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, হামলার আগে সে দুই পোটলা ক্যাপ্টাগণ ট্যাবলেট খেয়েছে বিধায়, সে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এমন কান্ড ঘটিয়েছে।। তবে এই বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি- ফ্রান্সে কোন জঙ্গি নাই। ফ্রান্সের জনগণ শান্তিকামী, তারা জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। ফ্রান্সের উন্নয়নের জোয়ারকে বিশ্বব্যাপী কলঙ্কিত করার জন্য বিরোধী দল এই হামলা চালাতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই। ইসলাম ধর্মের লোকজন এশার নামাজ বাদ দিয়ে যে মানুষ হত্যা করতে পারে না, সেটা আমরা আগেও বলেছি। এতেই প্রমাণিত হয় এই ড্রাইভার মুসলিম না। তাছাড়া লরির ড্রাইভাররা কখনো মুসলিম হয় না।''
অন্যদিকে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতি বলেছে, ''ফ্রান্সে কোন টেরোরিস্ট এটাক হয় নাই, এটা বরাবরের মতই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ফ্রান্সের জনগণদের বোঝা উচিত--শুধু ফ্রান্স কেন? এরকম ঘটনা বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মত দরিদ্র দেশেও হচ্ছে। ফ্রান্সের জনগণদের এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে পাত্তা দেয়াটা মোটেও উচিত না। তবে মানুষ গুলো কেন দৌড়ে পালাতে পারল না, গাড়ির নিচেই চাপা পরলো, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা কি আসলেই মারা পরেছে, নাকি নিজেরাই সুইসাইড করেছে সেটাই এখন দেখার বিষয়।''
আফসোস! আমার দেশের শান্তির ছত্রছায়ায় আশ্রিত ইমানদার মুমিন মুসলিম জনগণ, মন্ত্রী, এমপিরা সহ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও যদি গুলাশান হামলাটাকে বেশি সিরিয়াসলি টেরোরিজম হিসেবে না নিয়ে, ফ্রান্সের মত হালকাভাবে নিতো; তবে বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তিটা আর নষ্ট হতো না।