শ্যামল কান্তি ভক্ত ইস্যুতে আমি বলতে গেলে চুপই ছিলাম। নাজিমুদ্দিন হত্যার পর থেকে আমি এসব বিষয়ে বিচার চাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। সে ছিল আমার প্রায় প্রতি পোষ্টের লাইকার ও কমেন্টার। এখনো বিশ্বাস হয় না সে মারা গেছে। এসব ভাবলে নিজেকেই মাঝে মাঝে মৃত মনে হয়। এরপর থেকে নারীবাদী লেখা থেকে ধর্ম বিষয়ক চুলকানিটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ধার্মিকদের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। তাদের মত বললে বলতে হয়, ভগবানেশ্বরাল্লা তাদেরকে একটা মস্তিষ্ক দিয়েছেন, যার বলতে গেলে কিছু অংশও ব্যবহার না করে মরে যায়, একমাত্র ভরসায়- আল্লা যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।
ক্রমাগত হত্যা, জবাই, চাপাতি চালানো দেশে এখন ভাত পানি খাওয়ার মতই সহজ। যারা ভাবেন ধর্মের বিরুদ্ধে লেখলেই শুধু কোপ খাওয়ার সম্ভাবনা আছে অন্যথা নেই; তারা ভুলই ভাবছেন। দেশে এখন সিঙ্গেল একটা মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। অভিজিত রায় মারা যাওয়ার পর লেখক হত্যা যেভাবে শোরগোল ফেলেছিল, এখন এই বিষয়টা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমরা এখন ব্লগার লেখক হত্যাকে আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করি না। একদিন দেখবেন কোন পাড়ার এক মেয়ে মাথায় কাপড় ছাড়া বা বোরকা ছাড়া বের হয়েছে বলে মারা পরেছে, সেটাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হিসেবেই সবাই গ্রহণ করছে। যেভাবে ধর্ষণটা এখন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। এগুলো দেখতে দেখতে মেন্টাল ট্রমাটা কমাতে এসব বিষয়ে এখন পড়তেই ভাল লাগে, লিখে প্রতিবাদ করে কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না কোন ভাবেই। অন্যায় অত্যাচার শোষণের শাসনের খবর এখন শুধু পড়েই সাড়া।
চারদিকে এত এত দুঃসংবাদ শুনতে শুনতে আমি ক্লান্তই বলা যায়। যারা এখনো ক্লান্ত নয়, উদ্যমী তারা প্রতিবাদ করছেন, করবেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের জন্যও দেশজুড়ে আন্দোলন হয়েছে। পাশাপাশি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে সেলিম ওসমানের ঠাণ্ডা মাথায় থ্রেটও চলছে। কিছু ফেইসবুক পেইজ কিভাবে কিভাবে তাকে মারা যায়, কোথায় থাকে পাওয়া যাবে সব ইনফো দিয়ে প্রকাশ্য হত্যার উপায়ও বলে দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এগুলো সব হচ্ছে খোলাখুলি। ব্লগাররা নাকি লিখলেই ইউরোপ আমেরিকা ভিসা পায়। শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারার আগে তাকে কেউ অন্তত ইন্ডিয়ার ভিসাটা দিতে পারলে খুব ভাল হতো, তাতে অন্তত কন্যা আর পিতা বেঁচে যেতো। কারণ সংখ্যালঘুদের মেয়েরা এদেশে ইমানি সম্পত্তি। আমি আগামীতে উনার স্পষ্ট মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি। সাথে আরও দেখতে পাচ্ছি এসব বিষয়ে আমাদের নিশ্চুপ নির্লিপ্ত জনতার উদাসীনতা। আমাদের কানধরা টাইপের প্রতিবাদী মানুষগুলো গুলো এক সময় হতাশ হতে হতে প্রতিবাদের কানটাই কেটে ফেলে।
দ্রঃ কেউ কেউ শ্যামল কান্তির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পায়ে লুটিয়ে পরাতে খুব হতাশ হয়েছেন। আমি হইনি, তার এই পা জড়িয়ে ধরাই আমার এই স্ট্যাটাসের জন্মের কারণ। মানুষের জীবন যখন মৃত্যুর সম্মুখীন থাকে তখন সে খুবই ধার্মিক হয়ে যা, আর তিনি নাস্তিক ছিলেন কিনা আমরা তা জানি না। আমার ধারণা প্রাণের ভয়েই উনি মন্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরে প্রণাম করেছেন। উনার ভাষায় আমার ভগবান তো আপনে (সেলিম ওসমান)। আমাদের ভগবান এখন প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী এমপিরা। দাদা এটা তো বুঝতে হবে! বুঝতে হবে......
No comments:
Post a Comment