আমাদের সবারই কিছু কিছু খাবারের পছন্দ অপছন্দ থাকে, খাবারের রুচিবোধও ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন। আমার এক টিচার ছিল যিনি গরুর মাংস ছাড়া আর কিছুই খেতেন না।কিছু মানুষ আছে ভেজিটেরিয়ান। কিছু কিছু এলাকার মানুষ জীবনেও শুটকি মাছ খায় না। এইখানে আসার পর দেখলাম এরা ভাতই খায় না। কেউ কেউ খাইলেও মাসে ছয় মাসে রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে খায় অন্য খাবারের পাশাপাশি। আবার অন্যদিকে কিছু কিছু খাবারকে ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন রোগের কারণে নিষিদ্ধ করা হয়। কিছুক্ষেত্রে আমি যে খাবার পছন্দ করি তা খেলে যদি আমার ক্ষতি হয়, তবে আপনি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন। আমি হিরোইন ইয়াবা খেলে আপনি বাঁধা দিবেন, এমনকি আমার স্বজন হলে প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।
আল্লা সুদ, মদ, তামাক খেতে নিষেধ করেছেন। লোকে দিব্বি সিগারেট, সুদ খাচ্ছে। এইখানে অনেক বাঙ্গালী আছে ইউরোপিয়ানদের থেকেও বেশি মদ খায়, নিজেরা মদ বিয়ারের ব্যবসা করছে। বলতে গেলে এডিকটেড। ইউরোপিয়ানরা মাতাল হওয়ার জন্য সকাল বিকাল মদ খায় না। এরা মদ খায় মাতাল হওয়ার জন্য। অনেক মুসলিম মেয়েও আছে ছোট ছোট পোশাক পড়ছে, দেখলে চেনার উপায় নাই, ইউরোপিয়ান না বাঙ্গালী। কিন্তু শুকুরের মাংসের বেলায় তাদের জীবন মরণ সমস্যা।
কেউ শুকরের মাংস খাবে বা খেয়েছে এইটা শুনলে এদের জাত যায়, এদের অন্তর আত্মা শুকিয়ে যায়। একারণে অলি গলিতে গড়ে উঠেছে হালাল মাংসের দোকান। এ যেন এক আজব চিড়িয়া! একটা দেশে বসে সেই দেশীয় খাবারকে হারাম নামে এভয়েড করে আত্মশ্লাঘায় আর ঘৃণায় হালাল মাংসের দোকান দেওয়ার মত কাজ বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বা মরক্কোর মত মুসলিম দেশের লোকের পক্ষেই সম্ভব। সৌদিতে, বাংলায় বা পাকিস্তানে গিয়ে যদি যদি খৃষ্টানরা শুকরের মাংসের দোকান দিতো, তবে কারোর মাথা ঘাড়ে থাকতো না এটা নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া যায়।
আমি গরুর মাংস খেলাম যা জগতের অন্য কোটি কোটি লোক খাচ্ছে, আর এতে কোন ক্ষতি হচ্ছে না , সেকারণে আপনি আমাকে ধরে পিঠিয়ে মেরে ফেলবেন। আরেকজন মানুষ শুকুরের মাংস খায় বলে তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে, তাকে ঘৃণার চোখে-নাপাকের চোখে দেখতে হবে এটা এক ধরনের অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ । ঈশ্বরের দেয়া মহাপাপের নাম করে এসব খাওয়া নিষেধ করে- মানুষে মানুষে বিভেদ দ্বন্দ্ব ও বৈষম্য তৈরির জন্য এই হিংসাত্মক দর্শনকে আমরা বংশপরম্পরায় বহন করে চলছি।
No comments:
Post a Comment