Thursday, May 5, 2016

আত্মা এক দেহ থেকে আরেক দেহে প্রতিস্থাপন হয়। আমাদের পোশাক পুরাতন হয়ে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে আমরা যেমন এক পোশাক ফেলে দিয়ে নতুন পোশাক পরি তেমনই আত্মা এক দেহ মরে গেলে অন্য দেহে প্রতিস্থাপন হয়। আত্মার এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পরে হিন্দু পাঁঠারা এসে শক্তির অবিনাশীতাবাদ সূত্র তুলে ধরে আত্মার দেহান্তর সত্য বুঝাতে চাচ্ছে। এইখানে আমরা একটু শক্তি কাকে বলে আর অবিনাশীতাবাদ সূত্রটা কি একটু দেখে নেই।
শক্তি কাকে বলে? পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কাজ করার পরিমানকে শক্তি বলে। কাজ বা কার্য হচ্ছে বল ও বলাভিমুখী সরণের গুণফল। কৃতকাজের পরিমাণ দিয়েই শক্তি পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে। যেমন আমি বিশ কেজির একটা বস্তা উঠাতে পারি আপনি পারেন না, আমি দশ ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, আপনি পারেন না । এখানে হলো আমার আপনার শক্তির পার্থক্য। আমরা যেমন সময় পরিমাপ করি সেকেন্ডে, দৈর্ঘ্য পরিমাপ করি মিটারে, কোন বস্তুর ভর মাপি কিলোগ্রামে, তেমনই শক্তি মাপার ও একক আছে তাকে বলে জুল। কোন বস্তুর শক্তি বেশি কোন বস্তুর কম। শক্তির আবার বিভিন্ন রূপ আছে যেমন যান্ত্রিক শক্তি, তড়িৎ শক্তি, আলোক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, সৌর শক্তি ইত্যাদি। যেমন পানি গরম করতে তাপ শক্তি লাগে, বিদ্যুৎ জ্বলাইতে আলোক শক্তি লাগে, গান গাইতে শব্দ শক্তি লাগে। এখন আপনি চাইলেই আলোক আর তাপ শক্তি দিয়ে গান গাইতে পারবেন না। শক্তি প্রাপ্ত হতে হলে যে প্রাণ থাকতে হবে এমনও কোন কথা নাই। গাড়ির ইঞ্জিন নিষ্প্রাণ হইলেও এতে শক্তি সঞ্চারিত হয়, ইস্ত্রি নিষ্প্রাণ হইলেও আমরা তাপের দ্বারা কাপড় সোজা করি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে শক্তির সাথে প্রাণ বা আত্মা, জীবন, মরণের কোন সম্পর্ক নেই। যে কোন জড় বস্তুও শক্তি প্রাপ্ত হতে পারে।
এখন দেখি অবিনাশীতাবাদ সূত্র কি? 'শক্তির সৃষ্টি কিংবা বিনাশ নেই। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট। এটাকে বলা হয় শক্তির নিত্যতা সূত্র।' যেমন আপনি প্যাডেলে পায়ে শক্তি প্রয়োগ করলে সাইকেল গতিশক্তি প্রাপ্ত হবে, আপনি সুইচ টিপলে বিদ্যুৎ শক্তি আলোক শক্তিতে মানে লাইট জ্বলবে, আপনি চুলা জ্বলালে রান্না হবে, এক্ষেত্রে তাপ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এইভাবে সাধারণ এক শক্তি আরেক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পদার্থ বিজ্ঞানের মতে শক্তি সৃষ্টিও হয় না আবার ধ্বংস ও হয় না, এক প্রকার শক্তি অন্য প্রকারে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
এখন আসি আত্মার প্রসঙ্গে। যদিও বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত আত্মার নামক কোন কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পায় নাই, তবুও গীতার আত্মা আর পরমাত্মা তত্ত্ব শক্তির অবিনাশীতাবাদ সূত্রের মানে বিজ্ঞান খুঁজে পেয়েছে। আত্মা যদি শক্তির আরেক নাম হয় তবে আমার শক্তি বেশি পিঁপড়ার শক্তি কম। আমি মরে গেলে আমার আত্মা কি পিঁপড়াতে যাবে নাকি পিঁপড়ার আত্মাটা নব্য কোন মানুষের শরীরে যাবে? যদি গিয়েই থাকে তবে একটা মানুষ পিঁপড়ার শক্তি দিয়ে করবে কি? আর একটা পুঁটি মাছের শক্তি দিয়ে হাতি কি করবে? পিঁপড়ার আত্মা আর মানুষের আত্মা কি এক? মানুষের শক্তি আর মানুষের আত্মার পরিমাণ কি এক? আত্মাকে আমরা শক্তি দিয়ে মাপব কেন? যদি ধরে নেই আত্মা আর শক্তি এক জিনিস, মানে যদি আমরা শক্তি দিয়ে আত্মা পরিমাপ করি, তবে প্রাণী বিশেষে শক্তির তফাৎ হওয়ার কথা না। আমার আর পিঁপড়ার শক্তি এক থাকার কথা যেহেতু আত্মা মাপে শক্তি দ্বারা। নাকি প্রাণী অনুযায়ী আত্মার কম বেশি হয়ে থাকে? মানুষের আত্মা বেশি পিঁপড়ার আত্মা কম, এমন? বিজ্ঞান থেকে শক্তি ধার করে এনে আত্মার সাথে গোঁজামিল দিলে হিসাবে কমবেশি এবং গড়মিল হচ্ছে। শক্তি যেমন এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হয় তেমনে আত্মার পরিবর্তনের রূপ কি? সে যায় কোন মাধ্যম দিয়ে? সে কি ঠাণ্ডা হয়ে, গরম হয়ে, আলোর মত ঝলকানি দিয়ে যায়? সে কিভাবেই বা যাতায়াত করে? আত্মার রূপ কি? আত্মার পরিমাপ করে কিভাবে? সর্বোপরি আত্মা মাপা হয় কোন এককের ভিত্তিতে?

No comments:

Post a Comment