Thursday, May 26, 2016

ভগবত গীতা, তৃতীয় অধ্যায়ঃ শ্লোক-১৩
যজ্ঞশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘ্নগ পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাৎ।।
অনবাদঃ ভগবদ্ভভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারণ তারা যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহণ করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে তারা কেবলই পাপই ভোজন করে।
যেইসকল ভক্ত কৃষ্ণভাবনামৃত পান করেছে তাদেরকে সন্ত বলে। সন্তরা সর্বদা ভগবানের প্রেমে মগ্ন। তারা ভগবানকে অর্পণ না করে কোনও কিছুই গ্রহণ করেন না। আর যারা ভগবানকে অর্পণ করা ছাড়া আত্মতৃপ্তির জন্য নানা রকমের খাবার খায়, শাস্ত্রে তাদেরকে চোর বলা হয় এবং সেই খাদ্যের প্রতি গ্রাসে গ্রাসে তারা পাপও খেয়ে থাকে। এজন্য পাপ-মুক্ত হতে হলে সংকীর্তন যজ্ঞ করার শিক্ষা নিতে বলা হয়েছে। সমস্বরে বলেন --- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
অর্থাৎ আপনি যদি বৈধ উপায়েও টাকা উপার্জন করে ভগবানকে অর্পণ না করে কোন খাদ্য খান, তবে আপনার খাবারের প্রতি গ্রাসে পাপ ভক্ষণ করবেন, এবং আপনি চোর বলে গণ্য হবেন।
লন্ডনের বার্মিংহামে বাংলার মেলা হচ্ছে। পরিবারের সকল সদস্য মিলে সেই মেলার গুজাতীয় সঙ্গীত উপভোগ করতে করতে মা মেয়েকে বলছে, ''জানো লন্ডনে নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছে, মুসলিম। যদিও পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত তবুও এটাই লন্ডনের প্রথম মুসলমান মেয়র।'' মুসলিমরা আসলে মুসলিম খোঁজে যেমন শোওরে খোঁজে কচু। এরা বিধর্মীদের দেশে থেকে এদের দেশের টাকায় দেশে বিদেশে টাকার পাহাড় গড়ে মনে মনে এইসব দেশের সর্বক্ষেত্রেই মুসলিম দেখতে চায়। পারলে পুরো ইউরোপটাকে এরা মুসলমান বানিয়ে ফেলে, হোক পাকিস্তানি, হোক মরোক্কি, হোক আরবী বা হোক বাঙ্গালী। মুসলমান তাদের প্রায়রটির প্রথমে ।
ইউরোপে যে বাংলা চ্যানেলগুলো চলে, সেগুলো সাহেব বিবি গোলামের বাক্সের চেয়েও নিম্নমানের গোলাম। এই চ্যানেলগুলোতে মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার খবর যেমন সাথে সাথে প্রকাশ করে, তেমনি বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার খবর প্রচার করে তিন দিন পর, তাও দায়সারা নামেমাত্র।
এরা মেয়র নির্বাচনের খবর প্রচার করছে মহা উল্লাসে। সেই মেয়রের প্রশংসা করে এবং 'উনার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পেছনে পাকিস্তান বা কোন মুসলিম উম্মাহর বা ইসলামের কোন কৃতিত্ব নেই, এতে পাকি মুসলিমদের এতো উচ্ছ্বাসের কিছু নেই, তিনি মেয়র হয়েছেন উনার নিজের যোগ্যতায়। তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক, তিনি পাকিস্তানি নন' এরকম মন্তব্য করার জন্য গতকাল রাতে পাকিস্তানী এক ব্লগার খুররাম জাকিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এ খবর তারা প্রকাশ করনি, করবেও না। সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, রাষ্ট্র সহ রাষ্ট্রের একেকটা মুসলিম যেন একেকটা জলজ্যান্ত খুনি বা খুনির সমর্থক। আমি সেই মা মেয়েকে ব্লগারের কথা বলতে গিয়েও বলিনি, কারণ পাছে আবার আমার মাথা না যায়!
আচ্ছা এই যে পাকি মুমিনরা চাপাতি ব্যবহার না করে গুলি করে ব্লগার হত্যা করছে। এটা কি ইসলাম মতে সহি সম্মত হইছে? আমাদের দেশি মুমিনরা কি বলেন?
সবাই খালি রেফারেন্স চায়। রেফারেন্স এর বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আমি যদি বলি, আজ সিনেপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। লোকে সাথে সাথেই বলবে- আপনি যে মিথ্যে বলছেন না তার প্রমাণ কি? প্রমাণ সরূপ তারিখসহ আমাকে টিকিটের ছবি পোষ্ট দিতে হবে। সাধারণত নাস্তিকেরা সবসময় রেফারেন্স সাথে রেখে কিছু পোষ্ট করার চেষ্টা করে, তা না হলে মুমিনদের কাছে মিথ্যেবাদী সাজতে হবে। আপনি যদি বলেন- এই হাদিসটা তিরমিযি থেকে নেওয়া, তখন ওরা চাবে কত নাম্বারে আছে? নাম্বার দেখালে বলবে- বই এর পৃষ্ঠার ছবি দেন। পৃষ্ঠার ছবি দিলে বলবে- এইটা সহি হাদিস গ্রন্থ না, সহি হাদিস গ্রন্থ প্রমাণ করলে বললে- এই অনুবাদে ভুল আছে। অনুবাদ ঠিক আছে দেখাইলে বলবে- ইংরেজি অনুবাদ দেখুন, ইংরেজিও ঠিক আছে দেখালে বলবে- আরবিটাই সবচেয়ে সহি। আরবিটা সহি কেন? নবী কইছে।
মুমিনরা সারাক্ষণ রেফারেন্স দিয়ে সত্যতা প্রমাণ করতে চায়। একমাত্র আল্লার ক্ষেত্রে তাদের কাছে রেফারেন্স চাইলে বলবে আল্লা আছে এইটা নবী বইলা গেছে। নবী কইত্তে আল্লারে পাইল? আল্লায় কইছে? আল্লা কইত্তে আইল? নবী কইছে। নবী কইত্তে আল্লারে পাইল? আল্লায় কইছে? আল্লা কইত্তে আইল? নবী কইছে...!
ছবি কই? অনুবাদ কই? ছবি আর অনুবাদ না দেখালে কেমনে সহি হয় ভাউ, আপনি যে মিথ্যে বলছেন না তার প্রমাণ কি?
১) ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এমপির উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে সাজা। যদিও শিক্ষক বলেছেন তিনি এই ধরনের কিছু বলেন নাই, তবুও এমপির কোন নিকট আত্মীয়ের এই পোষ্টে নিয়োগদান কনফার্ম।
২) টিএসসির টয়লেটে আপত্তিকর অবস্থায় প্রেমিক-প্রেমিকা আটক। তারা যদি বিয়ে করে তাহলে কোনও মামলা দেয়া হবে না। অন্যথায় মামলা দেয়া হবে। ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেওয়া যেই দেশের মানুষেরা নৈতিক মনে করে, তাদের কাছে প্রেমিক প্রেমিকা খুবই লজ্জার বিষয়। শুনছি মোহাম্মদ ১৪ জনরে বিয়া কইরা লাগাইতেন, তাতে আয়েশাকে ধর্ষণও বৈধ হয়ে যায়। সবার উপরে লাগানো সত্য, তবে তা নিশ্চয়ই বিয়ের পর। যৌন-দাসী আর গণিমতের মালের হিসাব আলাদা।
৩) গ সেটের উত্তরমালা দিয়ে খ সেটের প্রশ্ন বিবেচনা করে এই যে বরিশাল বোর্ডে হিন্দু ধর্মের শিক্ষার্থীদের ফেল দেখাইছে এবং একারণে যেইসব স্টুডেন্ট আত্মহত্যা করেছে এর দায় সম্পুর্ণভাবে ইহুদী নাসারাদের।
৪) বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার কয়েকঘন্টার মধ্যেই সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এই হত্যার সাথে ভিক্ষুর স্বজনরাই জড়িত। তবে রাতে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন স্বজন জড়িত থাকার কথাটি তাঁর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখটা তার শরীর থেকে একটা বিচ্ছিন্ন অঙ্গ। কেউ কিছু মনে কইরেন না।
৫) আরেকটা খবর দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দিলে আর রেহাই নেই-র‍্যাব মহাপরিচালক। ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা সহ সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে তারে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে ব্লগার ও ফেবু ইউজাররা। এইজন্য সরকার দশ কোটি নিয়ে নামছে, আমাদের মত চুনোপুঁটিদের ধরতে। ব্লগার ফেবু ইউজারদের কতোল করে, থানায় নিয়ে ইসলামের কালো অধ্যায় মুছে ফেলা যাবে না। দশ কোটি কেন সহস্র কোটি নিয়া নামলেও শেকাছিনার মৌলবাদ মদদদাতা সহ খুনি পোষণকারী এইডা মিথ্যা হয়ে যাবে না। কারণ ফেবুকাররা কেউ সফী হুগুরের পা ধুয়ে পানি খায় না।
৬) জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা প্রতিবন্ধী : তারানা হালিম। কুত্তারে নিয়া গালি দিলে, বা ইসলামের প্রধান শত্রু ইহুদী নাসারা কইলে যেমন কুত্তা বা ইহুদী নাসারাদের কিছু যায় আসে না, তেমনি জঙ্গিদের প্রতিবন্ধী কইলে তাদের কিছু যায় আসবে না। কারণ প্রতিবন্ধীদের আমাদের দেশে মন্ত্রী এমপি প্রধানমন্ত্রীদের মত জঙ্গিদের বাঁচিয়ে ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে হয় না।
৭) জয় বাংলা(বলতে চাইলে)।
(আগে তোর) কুত্তা সামলা।
নব্বই এর দশকে তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে তোলপাড়, লক্ষ্য লক্ষ্য লোকের মিছিল মিটিং, অবরোধ, ফতোয়া জারী, মাথার মূল্য নির্ধারণ, পত্রিকায় দিনের পর দিন হাজারো লেখালেখি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আলোচনা সমালোচনা, হাইডিং, দেশত্যাগ এগুলা তসলিমা নাসরিনের আগে কার জন্য এমন তুমুল ভাবে হয়েছিল বাংলায়? তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি ছিল? নারীবাদ চর্চা নাকি নাস্তিক্যবাদের নামে ইসলাম ধর্ম বিরোধী কথা বলার কারণে? ঠিক কোন কারণে সে দেশে থাকতে পারেনি, কোন কারণে তাকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল? তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগে আদালতে মামলা উঠেছিল, গ্রেফতারি পরোয়ানা হয়েছিল? সেগুলো আমরা কেউ কি জানি নাকি জানি না? অথবা জানলেও না জানার ভান করে অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাই?
কেউ সহজে মুক্তচিন্তার আন্দোলনের কাজে তসলিমা নাসরিনের নামটা বা অবদানের কথাটা মুখে নিতে চায় না। নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলা কি মুক্তচিন্তার মধ্যে পরে না? নাস্তিকতাবাদ কি নারী মুক্তির বাইরের কিছু? হুমায়ুন আজাদ নারী নামক গ্রন্থ, যে বইটির বেশিরভাগ অংশই বিশ্বের অন্যান্য নারীবাদী লেখক, দার্শনিক এবং কবি, সাহিত্যিকদের নারী বিষয়ক আলোচনা সমালোচনামূলক সঙ্কলন বলা যেতে পারে। এছাড়া আরজ আলী আর আহমদ শরীফ নারী মুক্তির জন্য কি বলেছেন? কোথায় বলেছেন? নারী মুক্তি ছাড়া নাস্তিকতার চর্চা আদৌ কি কি সুফল বয়ে আনতে পারে? যদি আনতে পারে সেগুলো কি কি? যদি না আনতে পারে তবে এসব ক্ষেত্রে নারীবাদীদের অবদান স্বীকৃতি পায় না কেন?
তসলিমা নাসরিনের বাংলাদেশে থাকার সময়ে তাঁর চেয়ে হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ আর আরজ আলী মাতুব্বর কতোটা জনপ্রিয় ছিল? প্রথম কোন লেখকের লেখা হটাত উঠা ঘূর্ণিঝড়ের মত আন্দোলিত করে ভাঙ্গন ধরিয়েছিল ধর্মান্ধ কুসংরাচ্ছন্ন নারীবিরোধী বাঙ্গালি সমাজে ? বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার আন্দোলনে তসলিমা নাসরিনের অবদান কতটুকু? প্রান্তিক পর্যায়ে এসব বিষয়ে প্রথম কার নাম লোকের মুখে উঠে?
আজ ব্লগারদের মুক্তবুদ্ধির চর্চার কারণে মরতে হচ্ছে, দেশ ছাড়তে হচ্ছে। তাদেরও দেশে ঢোকার পারমিশন আছে। তসলিমা নাসরিনের নেই কেন? তসলিমা নারসিন দেশকে টেনে নিয়ে কোন চুলোতে ঢুকিয়েছেন? এতে কার কোন অঙ্গ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে? ঠিক কোন কারণে তাকে একটা গণতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? আমরা যারা নাস্তিক্যবাদ প্রচার করি বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি সমস্তই ধার্মিক পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নোংরা রাজনীতির দিকেই আঙ্গুল তোলে। ব্লগার বলেন কবি বলেন আর সাহিত্যিক যারাই এসব বিষয়ের বিরুদ্ধে লেখেন তাদের বেশিরভাগ অংশটাই পুরুষ। তারা নাস্তিক্যবাদ পছন্দ করেন কিন্তু পুরুষ-তন্ত্র বা ডিরেকটলি পুরুষের বিরুদ্ধে কথা বলাটা তারা খুব একটা পছন্দ করেন না; তাদের সংজ্ঞায় ঠিক শালীনতার পর্যায়ে পরে না। একজন নারী হয়ে পুরুষের প্রকাশ্য বা লুকায়িত সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে এভাবে লেখালেখিটা তাদের চোখে ধৃষ্টতা হিসেবই গণ্য। যে কারণে কোন ব্লগার, কবি, সাহিত্যিক, লেখক বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী কোন লেখার কথা-লেখকের কথা বলার সময় কেউই তসলিমা নাসরিনের নামটা মুখে নিতে চান না। সরকার, ধর্মান্ধ মৌলবাদী, পুরুষতান্ত্রিক সুশীল লেখক ব্লগার সবাই চায় তাঁর নামটা-তার ইতিহাসটা দেশ থেকে মুছে যাক। পারলে তারা দু কলম তাঁর বিরুদ্ধে লেখবে যাতে লোকে তাঁর সম্পর্কে ভুল তথ্য লালন করে, কিন্তু তাঁর অবদান, তাঁর স্বীকৃতি বা তাঁর পক্ষে কথা বলার জন্য তাদের কলমে কালি থাকে না, মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হয় না।
তসলিমা নাসরিন ইস্যুতে তারা নিজেরাই একেকজন সর্বেসর্বা। পারলে তারা মুক্তচিন্তা, নারীবাদ ও নাস্তিক্যবাদ প্রসারে পুরুষ লেখকদের অবদানের কথা জোরাল কণ্ঠে বলে দিবে। তসলিমা নাসরিন এসব বিষয়ে কিছু বলেননি, কিছু করেননি তাই তাঁর নাম বলা নিষিদ্ধ, তাকে নিয়ে দেশের কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি, যে কারণে পুরষ প্রথাবিরোধী লেখকের বই বাজারে প্রকাশের অনুমতি পেলেও, তসলিমা মত নারী লেখকের বই প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী বহাল থাকে। তাঁর নাম নেওয়া যেমন নিষেধ তাঁর বই প্রকাশ করা এবং বিক্রি করাও নিষেধ, তাঁর বই পড়া নিষেধ। অতএব তাঁর অবদান নিশ্চয়ই আকাশ থেকে পরবে না?
বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক লেখকেরা চায় তসলিমা নাসরিনের নামটা বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের মত এক অজানা গহ্বরে বিলীন করে দিতে, যাতে করে বাংলার নাস্তিক্যবাদ বা নারী জাগরণসহ সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষ লেখকদের অবদানটা নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করে, আর নারী লেখক তসলিমা নাসরিনের নামটা ধামাচাপা পরে অন্ধকারে অতলে অজানায় হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটা যত বেশি ঘটতে পারে ততোই তাদের জন্য মঙ্গল।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ উপলক্ষে অর্জুন গীতার উপদেশাবলি প্রাপ্ত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন দুই পক্ষ রণক্ষেত্রে সুসজ্জিত, তখন অর্জুন দেখতে পায় উভয় দিকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে তার পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য, মাতুল, ভ্রাতা, পুত্র, পৌত্র, সখা প্রভৃতি সমস্ত আত্মীয়স্বজন। এই যুদ্ধ সংঘটিত হলে তার বংশ বিনাশ ছাড়া আর অন্য কিছু হবে না। তখন অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে বলে, 'বংশের কাউকে হত্যা করলে শাস্ত্র মতে কুলক্ষয় দোষ হয়। কুল ক্ষয় দোষে দোষী হলে কুল ধর্ম নষ্ট হয়, কুল ধর্ম নষ্ট করলে কুলের স্ত্রী গণ ব্যভিচারিণী হয়, কুলের স্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হলে বর্ণ সংকর হয়। কোন ব্যক্তি এই দোষে দোষী হইলে সে কুল নাশকারী হিসেবে সে সহ তার সমস্ত পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয়। আমি এই মহাপাপের অনুষ্ঠান করতে পারব না। এই গুরুতর অপরাধ করা থেকে ধৃতরাষ্ট্র যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাও আমার জন্য কল্যাণকর। আমি প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাব। আমার এই রাজ্যের দরকার নেই। আমি এই যুদ্ধ করতে পারবো না।'
নির্দয় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তখন তাকে অর্জুন কে বলে, 'তোমার বুদ্ধি কম, শাস্ত্রের কথা বোঝার মত তোমার মেধা পরিপক্ব হয়নি। পণ্ডিত ব্যক্তি কি জীবিত কি মৃত কোন ব্যক্তির জন্যই পরিতাপ করে না। আর জীবের আত্মাই হল সব। আত্মা আগুনে পুড়ে না, জলে ভেজে না। আত্মা অবিনশ্বর। এর ক্ষয় নাই বিনাশ নাই। যে মনে করে জীবাত্মাকে বিনাশ করা যায় তিনি অনভিজ্ঞ। জীবিত ব্যক্তির মৃত আর মৃত ব্যক্তির জন্ম অপরিহার্য। অতএব তুমি শোক করা বাদ দিয়ে অত্যন্ত আনন্দ সহকারে জ্ঞাতিবর্গকে সমূলে হত্যা কর। এতে কেবল শরীর নষ্ট হবে আত্মার কিছু হবে না।'
শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে আরও বলে,'তুমি এমন মহারথী হয়ে যদি যুদ্ধ না করো তবে তুমি অন্য সকলের দ্বারা তিরস্কৃত হবে। তোমার মত ব্যক্তির তিরস্কৃত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। তাছাড়া তুমি যুদ্ধে জিতলে তুমি পৃথিবী উপভোগ করবে আর হারলেও তোমার জন্য স্বর্গ নিশ্চিত। দুই দিকেই তোমার লাভ। অতএব এই যুদ্ধ তুমি কর। করলেই তোমার জন্য লাভ আর লাভ। জয় পরাজয়ের কথা না ভেবে একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাওয়াই কর্তব্য''। 'পুরুষ কর্মানুষ্ঠান না করলে জ্ঞান প্রাপ্ত হয় না এবং জ্ঞান প্রাপ্ত না হলে কেবল সন্ন্যাস দ্বারা সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। '
কৃষ্ণ আরও বলে, ''প্রথমে বিষয়চিন্তা, চিন্তা হতে আসক্তি, আসক্তি হতে অভিলাষ, অভিলাষ হতে ক্রোধ, ক্রোধ হতে মোহ, মোহ হতে স্মৃতিভ্রংশ, স্মৃতিভ্রংশ হতে বুদ্ধিনাশ, বুদ্ধিনাশ হইতে বিনাশ উপস্থিত হয়। 'পুরুষ আসক্তি পরিত্যাগ করে কর্মানুষ্ঠান করলে মোক্ষ লাভ করেন।' তুমি লোকদিগের ধর্মরক্ষণার্থ কর্মানুষ্ঠান কর।'
যদিও এখানে বিষয় চিন্তা মোহ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে তবুও শ্রী কৃষ্ণ নিজেই অন্য জায়গায় অর্জুন কে স্বর্গের লোভ এবং রাজ্যের লোভ দেখিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলেছেন। গীতার এক জায়গায় বলা হয়েছে লোভ ত্যাগের কথা আরেকবার দেখানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লোভ। এটা নিঃসন্দেহে শ্রী কৃষ্ণের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। অপরদিকে যদি ধর্মরক্ষার্থেই যুদ্ধ করার কথা কৃষ্ণ বলে থাকে, তবে কুল ধর্ম বিনষ্ট করলে ধর্ম নষ্ট হবে সেটা আগেই বলা হয়েছে। এরপর ও যদি যুদ্ধ করতে হয় তবে অর্জুন স্বর্গপ্রাপ্ত হতে পারে না। কারণ কেউ কুল বিনষ্ট ধর্ম নষ্ট হয়, আর ধর্ম নষ্ট হলে কিভাবে পুর্বপুরুষ সহ নরক প্রাপ্ত হয় তা উপরে বলা হয়েছে।
এইসকল যুক্তি দেখে পড়ে বুঝে হিন্দু উপাসকেরা নিষ্ঠুর নির্দয় শ্রী কৃষ্ণের মত ভগবান কে উদার, দয়াবান, শ্রেষ্ঠ জানতে বা মানতে বা বলতে তারা পিছপা হয় না। এইসব উপদেশ শ্রবণ করে সম্পত্তির জন্য হিন্দু উপাসকেরা পিতৃকূল হত্যা, বংশ নির্মূল করার মত গর্হিত কাজের মধ্যেও মহত্বতা খুঁজে পান। ধর্ম যুদ্ধ বা ধর্ম রক্ষার্থে বিভিন্ন অজুহাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হলেও, মূলত এই যুদ্ধটা ছিল অর্থ রক্ষা রাজ্য রক্ষা আর বিষয়াদি রক্ষার যুদ্ধ।
তনুর জন্য তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল, ফলাফলে আমরা কিন্তু আশাবাদী  । শিক্ষকের জন্যও হচ্ছে, সবার জন্য হওয়া উচিত। কিন্তু ব্যাপার হলও আমাদের চেতনা আমরা একাত্তরে ঘুম পারাইয়া রাখছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা হটাত জেগে উঠে। কোথায় যে জাগে কোথায় যে জাগে না সেটা বুঝা দায়। শিক্ষক গুরু তিনি শ্রদ্ধার পাত্র, তার জন্য প্রতিবাদ করতে হয়। তাই সবাই ওসমান গুষ্টির আর লীগের বালের নাগাল না পেয়ে রবীন্দ্র নজরুল সহ নিজ নিজ কান ধরতেছি। কান ধারায় কিছু হোক আর না হোক, অভিনব একটা উৎসবমুখর প্রতিবাদ তো হচ্ছে। এইরকম সেলিব্রেটিরা কয়েকদিন গণজাগরণ মঞ্চেও এসে স্লোগান দিত, আমি দিতাম; সে কি তীব্র প্রতিবাদ।
কিন্তু এমন অনেক মা আছে যাদেরকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়। তখন এই জাতি মায়ের জন্য কাঁদতে পারে না। একজন শিক্ষিকা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনি কারোর মা এখনো হয়েছেন কিনা জানি না। তার জন্য আমরা কেউ কিন্তু নিজেদের চ্যাট ধরে প্রতিবাদ করিনি, কখনো করব এমন আশাও রাখি না। (অবশ্য ধর্ষণের জন্য মা লাগবে এমন কোন কথা নেই, শিশু বাচ্চা হলেও চলে। আমি শিক্ষক শ্রদ্ধার পাত্র, তাই মা আমাদের কেমন শ্রদ্ধার যোগ্য বুঝাইতেই মাকে টেনেছি। প্রতিদিন আমরা আর কিছু করি বা না করি, বিরোধ হলেই ধরে মাকে আগে ছুদে দেই।)। কারণ ধর্ষণ এই দেশে পানিভাত, কয়টা ধর্ষণ এবং পরবর্তী হত্যা বিচার পায়? আর পাইলেই কি ধর্ষণ উৎসব বন্ধ হয়? হয় না। এটা চলমান, আগেও চলেছিল, বর্তমানেও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। ধর্ষণের পর মেরে ফেলতে পারলে সেটা আরও সহি, কোন প্রমাণ রইলো না। মা মরলেই কি বেশ্যা মরলেই কি! ধর্ষণের প্রশ্নে হিন্দু মুসলিম আমরা সকলেই পুরুষ, সকলেই ভাই ভাই। অবশ্য বঙ্গদেশে বিধর্মী নারীদের ধর্ষণ করতে পারলে সাথে সোয়াবও ফ্রি।
ভালোর ভালো শিক্ষক মশাই এখনো এই দেশে বেঁচে আছেন। মরে গেলে হয়তো এই সত্যটাও বের হতো না যে, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগটা মিথ্যা ছিল। আর ইসলাম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মরলে বিচার পাওয়ার কেমন আশা থাকে সেটাতো আমাদের সবারই জানা।
ধর্ষণের বিপক্ষে আমার পোষ্ট দেখে Debasish Ghosh নামের এক বিজ্ঞ ব্যক্তি আমার পোস্টে মন্তব্য করেছেন, 'ধর্ষণ বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম।' কি রকম অভিজ্ঞতা? এমন প্রশ্ন পুনরায় করার পর তিনি বললেন, '' আপনার পোষ্টে ধর্ষণ জাতীয় লেখার আধিক্য থেকে মনে হয় এ ব্যাপারে আপনার অবশেসন আছে। কিছু মনে করবেন না plz.''
আমি ধর্ষণ বিরোধী পোষ্ট দেই বলে আগেও অনেকেই বলেছে আমি নাকি জীবনের কোন না সময় গ্যাং রেপের শিকার হয়েছি, তা না হলে ধর্ষণের মত এমন পবিত্র বিষয় নিয়ে এতো চুলকানি কেন? আমি বেশ্যাবৃত্তির বিষয়ে পোষ্ট দিলে লোকে ধরে নেয়, আমি একজন উত্তম প্রজাতির বেশ্যা। আমি ইসলাম ধর্ম বিরোধী পোষ্ট দিলে তার ধরে নেয় -জার্মানি যাওয়ার লোভে ইসলাম নিয়ে লেখালেখি করি। আমি হিন্দু ধর্ম বিরোধী পোষ্ট দিলে তারা বলে মুসলিম পরিবারে জন্মায়ে হিন্দু ধর্ম বাদ দিয়ে বাপ দাদার ধর্ম নিয়ে লিখলেই ভাল হয়, কাল আবার একজন বললেন খ্রিষ্ঠান ধর্ম নিয়ে লিখি না কারণ এতে ইউরোপের ভাত জুটবে না। আপনারা যে যার মত ভেবে নিন সুবিধে-মত। কারণ আপনাদের ধর্মের ল্যঞ্জা ধরে টান দিলে নিজেদের ল্যঞ্জাগুলা বের হয়ে আসে।
এবার একটু আমি বলি, দেশে যে হারে ধর্ষণ বেড়েছে, আর ধর্ষণের এমন আধিক্য দেখেও এই বিষয়ে আপনারা যেভাবে চুপ থাকেন, এতেই কি প্রমাণ হয় না আপনারা একেকজন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই ধর্ষণের সমর্থক? আর একারনেই আপনাদের মত মিউ মিউ চুক চুক টাইপের সব গুলা পুরুষকে আমার ধর্ষক মনে হয়। কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আরও একটু বলি, এই যে নাস্তিকদের পোস্টে পুরুষেরা এসে তাদের মা বোনকে ছুদে দিয়ে খাল বানানোর ইচ্ছা পোষণ করে, আর আপনারা এসব দেখে শুনে বুঝেও যখন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ ভাবে এইসব মা ছুদাদের সমর্থন করেন। এসব দেখে আমার সত্যিই মনে হয় আপনারা একেকজন নিজেদের মাকে ছুদার ক্ষেত্রে খুব বেশি এক্সপার্ট। কিছু মনে করবেন না প্লিগ লাগে।
১) যখন কোন মানুষ স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতরায়, তখন দৃশ্য দেখতে খুব মজা। কেউ কেউ খুব আফসোস করে, আহারে কত কষ্ট করতেছে। আবার কেউ কেউ বলে, ব্যাটা পাগল, না হলে কেউ এমন খরস্রোতে সাঁতরাইতে নামে? জগতে অন্য মানুষের কষ্ট দেখার আনন্দ সবচেয়ে বড় আনন্দ।
২) 'এমন দুই চারটা হাদিসের কিতাব পড়ে সিদ্ধান্তে আসাটা তার চরম ভুল। হাদিসের মর্মগুলো অন্য রকম।' বাজারের সবচেয়ে বড় ত্রাস ব্যবসায়ী যখন তার পুত্রকে হাফেজ বানায়া ডিরেক্ট বেহেস্তের রাস্তা খোঁজে, তাদেরকে এই কথা বলে দেইখেন; মাইর একটাও আর মাটিতে পরবে না।
৩) 'বর্তমান সমাজে কিছু-পুরুষও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, নারী পুরুষের ভেদাভেদ চাই না, আমরা সবাই মানুষের এইটাই হোক মানবতার মাপকাঠি।' মানুষ বইলাই পুরুষসহ ভগবানেশ্বরাল্লাও ভেদাভেদ করছে, পশুদের ভেদাভেদ নাই বলে তাদের স্ত্রী লিঙ্গের পর্দার ভিত্রে না থাইকাও ধর্ষণ খাইতে হয় না।
৪) 'মুক্তমনারা গালিগালাজ করে না। এইটা মুক্তমনার লক্ষণ না।' তারমানে বদ্ধ-মনারা গালিগালাজ করে এইটা তাদের দ্বারাই স্বীকৃত। তারা মুক্তমনাদের গাইলাবে যত খুশি, সুযোগ পেলে কল্লাও নামাবে। এর বিপরীতে মুক্তমনারা উলটা গাইলাইলে 'মুক্তমনা' সংজ্ঞার মার্জিন ব্র্যাক করবে; এইটাও খুনি আর ধর্দেষকদের কাছ থেকে শিখতে হবে। মুক্তমনার সংজ্ঞাটা কি গালিবাজদের বানানো?
৫) 'আপনারা শরীরে যতটুকু কাপড় রাখেন তাও খুলে ফেলেন, আপনাদেরকে আরও মুক্তমনা , আধুনিক মনে হবে। বোরখার পিছনে সময় না দিয়ে আরও আধুনিক হয়ে যান। পশুদেরও তো পোশাক নাই।' পুরুষেরা যে কাপড় খোলার স্বাধীনতা রাখে; তারা কি পশু?
৬) 'আপনার সাথে দেখা হলে একটাই প্রশ্ন করতাম যে, আপনি যদি মারা যান তাহলে কি আপনাকে জানাজা করে দাফন করা হবে নাকি পুড়ে ফেলা হবে কিংবা কফিনে ভরে কবর দেয়া হবে?'
মরলে কবর, দাফন, কফিনে ভরা হবে কিনা সেটা নিয়ে ভাবনা অবান্তর। যাদের পরকালের ভয় আছে, তারা জোর কইরা অন্যকে পরকালে নিয়ে যাইতে চায় বলেই আস্তিকেরাই নাস্তিক মরলে এগুলা করে। এইগুলা করতে নাস্তিকেরা বলে যায় না, তারা বড়জোর মেডিক্যালে দান কইরা যায়।
৭) হিঁদুগুলা নাস্তিক সাইজা কেমনে নাস্তিকদের মাঝে মিশে আছে, সেটা হিন্দু ধর্ম বিরোধী পোস্ট না দিলে বুঝা দায়! বাট কবি বলেছেন, ল্যাঞ্জা নাকি কোনভাবেই লুকানো যায় না।
‘হেড স্যার ক্লাসে ছেলেমেয়েদের খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে আমাকে বলেন- তুইও নাপাক তোর আল্লাহও নাপাক। পরে হেড স্যার আমাকে মারধর করেন। আমি ব্যথা পাওয়ায় আল্লাহ আল্লাহ বলতে থাকলে হেড স্যার বলেন- আল্লাহ বলতে কিছু নাই।’ শিক্ষক শ্যামল কান্তি এমন কথা বলেননি, যদি বলেও থাকেন তাতে করে আপনাদের ঠিক কোন জায়গায় আঘাত হানল?
'তুই নাপাক আর তোর আল্লাও নাপাক' এই কথা যদি আপনাকে কেউ বলেই থাকে, এতে কি আপনি নাপাক হয়ে যাবেন বা আপনার এই বিশ্বভ্রমান্ডের সৃষ্টিকর্তা এতো বড় আল্লা কি নাপাক হয়ে যাবে? মেয়েদের মাসিক হওয়ার মতো আল্লাহ বা কোন পুরুষ নাপাক হয়ে যাওয়া কি এতো সোজা? আপনাদের বিশ্বাসের দৌড় সত্যিই তাইলে মসজিদ পর্যন্ত? মানুষ ভিন্ন গ্রহে যাইতেছে, বিজ্ঞানীরা মানুষের কল্যাণের জন্য একের পর এক নতুন নতুন মানব কল্যানকর উপাদান আবিষ্কার করতেছে। কোন বিজ্ঞানীকে 'তুই নাপাক বা তোর আবিষ্কার নাপাক' বলে দেইখেন তো তারা কি বলে? খুব বেশি হলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আপনার অজ্ঞতার জন্য করুণার দৃষ্টি নিয়ে আপনার দিকে তাকাবে অথবা আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে 'বেঁচে থাকো বাছা'। যেখানে পাক নাপাক শব্দ দুটোরেই কোন ভিত্তি নেই, পাক নাপাক মাপার কোন ওজন যন্ত্র নেই কিম্বা পাক নাপাক কোন সংখ্যা দিয়ে দিয়ে গুণা যায় না অথবা পাক নাপাকের নির্দিষ্ট কোন পরিমাণও নাই; সেখানে এইসব সত্য ভেবে বা অপমানজনক ভাবে নেওয়ার কোন মানে আছে কি? যদি পাক নাপাককে আপনি সত্য হিসেবে না-ই নিচ্ছেন, আপনি বা আপনার আল্লা যদি নাপাক না-ই হয়ে থাকে তবে আপনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিবেনই বা কেন?
কেউ যদি কার্টুন এঁকে বলে 'এটা নবী মোহাম্মদ' মুসলিমরা ধরে নেয় এটা নবী মোহাম্মদ। কেউ যদি বলে আল্লাহ নাপাক তারা ধরেই নেয় আল্লা নাপাক। কিম্বা কেউ যদি বলে আল্লা নাই আপনারা ধরেই নেন আল্লা নাই। এতো ছটাক খানেক বুদ্ধি নিয়ে আপনারা বাঁচেন কেমন করে? এটা নিয়ে বড়জোর হাসিঠাট্টা করা যায়, এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে ইমানদার ভাউয়েরা? আপনার আল্লা নবীর অস্তিত্ব এতো ঠুনকো কেন যা মানুষের মুখের কথায় বা কলমের খোঁচায় নাই হয়ে যায়? একবার ভাবতে পারেন, আল্লা নবী আপনাদেরকে কতোটা মানসিক দৈন্যতা গিফট করেছে?
আমরা বাবা মাকে প্রকাশ্যে 'ভালবাসি' বলতে পারি না, ভাই বোনকে বলতে পারি না, বন্ধুবান্ধবকে বলতে পারিনা, অপর তো দূর কি বাত। বাবা মা তার সন্তানদের আদর করে বুকে নিতে পারে না, সন্তান বাবা মায়ের শরীরের কাছে ঘেষতে পারে না। পোষা বেড়ালকে কাছে টেনে চুমু খাওয়া গেলেও পছন্দের কাউকে আমরা প্রকাশ্যে চুমু খেতে পারি না; বাবা মা ভাই বোন প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রেও চুমুটা ট্যবু।
প্রকাশ্যে প্রেমিক প্রেমিকার হাত ধরতে পারে না, ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে না। স্বল্প পরিচিত কাউকে আলিঙ্গন পুর্বক চুমুটা একটা সম্ভাষণ, এটা আমরা ভাবতেই পারি না। আমরা একমাত্র ঘরের দরজা বন্ধ করে স্বামী স্ত্রীতে ভালবাসা, চুমু ও জড়িয়ে ধরাকে বৈধ মনে করি। আমাদের কাছে চুমু মানেই সেক্স, ভালবাসি মানেই সেক্স, জড়িয়ে ধরা মানেই সেক্স। আমরা ভালোবাসা বুঝি না, আমরা চুমু বুঝি না, আমরা আলিঙ্গন বুঝি না, আমরা প্রেম বুঝি না; আমরা একমাত্র সেক্স বুঝি। যে কারণে প্রকাশ্যে প্রেম নিবেদনের নামে সেক্স করার অপরাধে কমার্স কলেজের প্রেমিক প্রেমিকাকে বহিষ্কৃত হতে হয়।
শ্যামল কান্তি ভক্ত ইস্যুতে আমি বলতে গেলে চুপই ছিলাম। নাজিমুদ্দিন হত্যার পর থেকে আমি এসব বিষয়ে বিচার চাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। সে ছিল আমার প্রায় প্রতি পোষ্টের লাইকার ও কমেন্টার। এখনো বিশ্বাস হয় না সে মারা গেছে। এসব ভাবলে নিজেকেই মাঝে মাঝে মৃত মনে হয়। এরপর থেকে নারীবাদী লেখা থেকে ধর্ম বিষয়ক চুলকানিটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ধার্মিকদের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। তাদের মত বললে বলতে হয়, ভগবানেশ্বরাল্লা তাদেরকে একটা মস্তিষ্ক দিয়েছেন, যার বলতে গেলে কিছু অংশও ব্যবহার না করে মরে যায়, একমাত্র ভরসায়- আল্লা যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।
ক্রমাগত হত্যা, জবাই, চাপাতি চালানো দেশে এখন ভাত পানি খাওয়ার মতই সহজ। যারা ভাবেন ধর্মের বিরুদ্ধে লেখলেই শুধু কোপ খাওয়ার সম্ভাবনা আছে অন্যথা নেই; তারা ভুলই ভাবছেন। দেশে এখন সিঙ্গেল একটা মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। অভিজিত রায় মারা যাওয়ার পর লেখক হত্যা যেভাবে শোরগোল ফেলেছিল, এখন এই বিষয়টা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমরা এখন ব্লগার লেখক হত্যাকে আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করি না। একদিন দেখবেন কোন পাড়ার এক মেয়ে মাথায় কাপড় ছাড়া বা বোরকা ছাড়া বের হয়েছে বলে মারা পরেছে, সেটাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হিসেবেই সবাই গ্রহণ করছে। যেভাবে ধর্ষণটা এখন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। এগুলো দেখতে দেখতে মেন্টাল ট্রমাটা কমাতে এসব বিষয়ে এখন পড়তেই ভাল লাগে, লিখে প্রতিবাদ করে কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না কোন ভাবেই। অন্যায় অত্যাচার শোষণের শাসনের খবর এখন শুধু পড়েই সাড়া।
চারদিকে এত এত দুঃসংবাদ শুনতে শুনতে আমি ক্লান্তই বলা যায়। যারা এখনো ক্লান্ত নয়, উদ্যমী তারা প্রতিবাদ করছেন, করবেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের জন্যও দেশজুড়ে আন্দোলন হয়েছে। পাশাপাশি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে সেলিম ওসমানের ঠাণ্ডা মাথায় থ্রেটও চলছে। কিছু ফেইসবুক পেইজ কিভাবে কিভাবে তাকে মারা যায়, কোথায় থাকে পাওয়া যাবে সব ইনফো দিয়ে প্রকাশ্য হত্যার উপায়ও বলে দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এগুলো সব হচ্ছে খোলাখুলি। ব্লগাররা নাকি লিখলেই ইউরোপ আমেরিকা ভিসা পায়। শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারার আগে তাকে কেউ অন্তত ইন্ডিয়ার ভিসাটা দিতে পারলে খুব ভাল হতো, তাতে অন্তত কন্যা আর পিতা বেঁচে যেতো। কারণ সংখ্যালঘুদের মেয়েরা এদেশে ইমানি সম্পত্তি। আমি আগামীতে উনার স্পষ্ট মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি। সাথে আরও দেখতে পাচ্ছি এসব বিষয়ে আমাদের নিশ্চুপ নির্লিপ্ত জনতার উদাসীনতা। আমাদের কানধরা টাইপের প্রতিবাদী মানুষগুলো গুলো এক সময় হতাশ হতে হতে প্রতিবাদের কানটাই কেটে ফেলে।
দ্রঃ কেউ কেউ শ্যামল কান্তির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পায়ে লুটিয়ে পরাতে খুব হতাশ হয়েছেন। আমি হইনি, তার এই পা জড়িয়ে ধরাই আমার এই স্ট্যাটাসের জন্মের কারণ। মানুষের জীবন যখন মৃত্যুর সম্মুখীন থাকে তখন সে খুবই ধার্মিক হয়ে যা, আর তিনি নাস্তিক ছিলেন কিনা আমরা তা জানি না। আমার ধারণা প্রাণের ভয়েই উনি মন্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরে প্রণাম করেছেন। উনার ভাষায় আমার ভগবান তো আপনে (সেলিম ওসমান)। আমাদের ভগবান এখন প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী এমপিরা। দাদা এটা তো বুঝতে হবে! বুঝতে হবে......
'একটি চোখে কাজল আর অন্য চোখ সাদা,
তুমি গভীর ঘুমে আমার শুধুই গলা সাধা!'
সঞ্জীবের এই গানটা শোনার সময় এক চোখে কাজল কেউ পরেছে ভাবলেই ভুত প্রেতের মুখ ভাসতো কল্পনায়। ইদানিং এখানে ছেলেরা এক চোখে কাজল পরছে। দেখতে মানুষের মতই লাগে। মুসলিম পুরুষেরা তো অনেক আগে থেকে দুই চোখে সুরমা দেয়। কাজল শুধু মেয়েদের সাজ এটা ভাবলে ভুল হবে। কাজল কাল চোখ ছেলে বা মেয়ে উভয়কেই দেখতে সুন্দরই লাগে।
এক পায়ে নূপুর তোমার আর অন্য পা খালি। এক পায়ে নূপুরের স্টাইলটা অনেক বছর যাবত আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এদেশীয়রা ইন্ডিয়ান স্টাইলের রূপোর নূপুরের দিকে ঝুঁকছে, আর আমরা পাতলা চেইনের মত এক ঘুঙ্গুর ওয়ালা পায়েল বেছে নিচ্ছি।
ইউরোপিয়ান ছেলেরা কান ফুঁড়ায় না বা কানে দুল পরে না এরকম খুব কম পাওয়া যায়। কানের ফোঁটায় এমন বড় বড় চ্যাপ্টা বল টাইপের রিং পরে দেখলে মনে হয় কানের লতি পুরোটাই ছিদ্র করে ফেলেছে। এবারে ছেলেদের স্টাইল হিসেবে এগিয়ে আছে নাকের নোলক, অনেক মোটা সিলভার কালারের রিং এর নোলক। শরীরের কোন না অংশে ট্যাটু ও খুবই কমন স্টাইল। কেউ কেউ ফুল পাখি লতা পাতা সাপ বিচ্ছু দিয়ে শরীরের বেশিরভাগ অংশই ঢেকে ফেলে, আবার কেই কেউ কোন ছোট সাইন বা নামের ট্যাটু করে শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশে। সামার এলে ট্যাটুর দোকানের রমরমা ব্যবসা, উইন্টারে দোকানই বন্ধ থাকে।
চুলের স্টাইলের তো যুগান্তকারী পরিবর্তন। রিহানার মাথার একপাশে বাটি ছাট এবং আরেকপাশে লম্বা চুল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নেইমার কাটের ছোঁয়া বাংলাদেশের নিউমার্কেটের দোকানের ছোট ছেলেদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেলেও, এখানকার বেশিরভাগ ছেলের চুল নেইমারের মত দুই পাশ সহ পেছনে চাঁছা, শুধু মাথার উপরের অংশে লম্বা চুল। এরা গোসল না করলেও সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলটা শ্যাম্পু করে নেয়। মেয়েদের চুলের কালারের বাপরে মা, প্রায় প্রতিমাসেই নতুন নতুন কালার করতেই হবে, এই সাদা তো এই কালা।
মেয়েদের ব্রু প্লাক, আপার লিপ বা হাত পায়ের পশম তোলার ওয়াক্সটা প্রায় সব মেয়েই করে। নাকের ভেতরের পশমও সব ছেলে মেয়ে রেগুলার উঠিয়ে পরিষ্কার করে। এগুলো না করা থাকলে তারা মানুষকে নোংরা ভাবে। আগে ইন্ডিয়ান বা বাঙ্গালি নায়কেরা বুকের পশম থাকাকে ম্যানলি ভাবতো, এখন ইউরোপের দেখাদেখি তারাও বুকের পশম তুলে ফেলে। না করলে বোধহয় অনেকটা বন মানুষের মত দেখা যায়। এখানকার ছেলেরাও বুকের পশম রাখে না, রেগুলার ওয়াক্স করে। কিছু কিছু ছেলেকে দেখলাম পায়ের লোমও ওয়াক্স করে মেয়েদের মত তুলে ফেলেছে। স্টাইল, সৌন্দর্য বা ফ্যাশন ছেলেতে মেয়েতে ভেদাভেদটা অনেক কমে এসেছে ইউরোপে। মেয়েদের শরীর তুলোমূলক সুন্দর, এবং সাজগোজে তাদেরকে সুন্দর লাগে বিধায় হয়তো ছেলেরাও মেয়েদের মত শরীরের স্টাইলের ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। তাদেরকেও সুন্দর লাগুক। কে না চায় নিজেকে অন্যদের থেকে আরেকটু বেশি আধুনিক ও সুন্দর দেখতে?
তারকা খ্যাতি পাওয়ার জন্য মেয়েরা খুব সহজে বেশ্যাবৃত্তিতে নেমে যায়। এটা মিডিয়ার মেয়েদের বিরুদ্ধে খুব কমন একটা অভিযোগ। বলনে-ওয়ালাদের সুবিধার্থে ধরলাম মেয়েটা স্বেচ্ছায় টাকার লোভে এই পেশায় নামে। এসব মেয়েদের কোন অঘটন ঘটলে আমরা আহা, উহু, ইশ, ছি: থুঃ ইত্যাদি অভিব্যক্তিতে প্রকাশ করে কতই না রঙ্গ করি।
যারা এই মেয়েটিকে টাকা দিয়ে এই পেশায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে তারা কারা? তাদেরকে কি আমরা চিনি নাকি চিনি না? নাকি চিনেও না চেনার ভান করি? নাকি আমি আপনিই তাদের অন্তর্ভুক্ত? একারণেই কি সমস্ত সমালোচনা মেয়েটির উপর চাপিয়ে আমরা নিজেদের দোষ লুকাতে চাই? আমাদের কিছু অঘটন ঘটে না কেন? আমরা কেউই মেয়েটির মত আলাদা বিশেষণ বিশেষিত হই না কেন? আমরা কি কোন পরিবারে থেকে বেশ্যা-ভোগ করি? না করলে মেয়েটির মত আমাদের আলাদা কোন আলয় থাকে না কেন? আমাদের বাসায় কি জানে আমরা বিবাহিত বা অবিবাহিত অবস্থায় বেশ্যা ভোগ করছি? যদি জানে তবে মেয়েটির মত আমাদের উপর ঘৃণা বর্ষিত হয় না কেন? না জানলে আমরা আমাদের পরিবারের সাথে প্রতারণাটা করছি কেন? করে পার পেয়ে যাচ্ছি কিভাবে? মেয়েটিও আমার মত একি কাজ করে পার পাচ্ছে না কেন?
ভিন্ন প্রসঙ্গ: বিয়ের আগে সম্মতিতে ছুদাছুদি করলে কোন ছেলের যদি বাল না ছিঁড়া যায়, মেয়েদের মানসম্মান এতো চুলোয় যায় কেন? এইটা যতদিন মেয়েরা না বুঝবে, যত দিন এক ছেলে একটা মেয়েকে ছুদে ছেড়ে দিলে সেই মেয়েটা আরও দশটা ছেলেরে ছুদে ছেড়ে দেওয়ার মত শক্ত মানসিকতা গড়তে না পারিতেছে, আর যতকাল বিয়ের নামক কমিটমেন্টের নামে প্রতারণার সিস্টেমটা বন্ধ না হচ্ছে; ততদিন সাবিরার মত মেয়েরা প্রেমিকের সাথে বিয়ের দিন-সুন্দর করে বউ সাজার স্বপ্ন ভঙ্গের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে ছারখার সুইসাইড খাবে। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাকে গলা বড় করে বেশ্যা ডেকে সুবিধাজনক অবস্থানটা বজায় রাখবে।
আত্মহত্যা একটা ব্যাধির নাম। জীবনের কোন এক হতাশাজনক সময়ে কোন ব্যক্তির আত্মহত্যা করার সাধ জাগলে, সে তা হটাত পাওয়া দেবতার বরের মত জীবনভর বয়ে নিয়ে বেড়ায়। যেটার পেছনে আসলে কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নাই। আপনি যদি কোন বিপর্যস্ত মুহূর্তে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন, আপনি আপনার সেই অবস্থা থেকে নিম্ন অবস্থানের লোকের কথা ভেবে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেতে পারেন। যেমন ধরুন আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকা আপনাকে ছেড়ে চলে গেলো বলে আপনি আত্মহত্যা করবেন বলে ভাবছেন, সে মুহূর্তে আপনি যদি কোন ব্যক্তিরপ্রেমিক প্রেমিকা মৃত্যুর সংবাদের কথা ভাবেন তবে আপনার সে চিন্তা অন্য দিকে মোড় নিতে পারে। অনেকটা রবীন্দ্রনাথে জুতা চুরির মত, আপনি ভাল জুতা পেলেন না বলে মন খারাপ করছেন যার পা নাই সে তবে কি করবে।
যে চলে যায় তাকে চলে দিতে হয়, এটাই নিয়ম। কাউকে জোর করে আটকিয়ে রাখা যায় না, মনের উপর জোর চলে না সেটা আপনার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। দশ বিশ বছরের ভালবাসার বিবাহিত সংসারও কখনো কখনো টেকে না। আপনি যদি আপনার প্রিয় মানুষটির প্রতারণার শিকার হওন সেটা হাসিমুখে না মানতে পারলেও একটু কষ্ট করে হলেও মেনে নেওয়া উচিত। প্রেমে বিচ্ছেদের কারণে আত্মহত্যা হোক বা অন্য কোন কারণে হোক আত্মহত্যা করাটা এক ধরনের বোকামি। এই আবেগী মানসিক অধঃপতনের সময়টা কোন ভাবে পার করতে পারলেই আপনি আপনার জীবনে জিতে যাবেন। এটা অনেকটা পুনর্জন্মের মত আনন্দ দিতে পারে। কিন্তু একবার মরে গেলে আর ফেরার উপায় নাই।
একারণে যদি কারো কখনো একান্তই জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়, তার উচিত অন্য কারোর সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করা। তখনই বুঝতে পারবেন সে ব্যক্তিটি আপনাকে কতোটা ভালবাসে। কোন না কোন ভাবে সময়টা বইতে দিলেই এক সময় এমন দুর্ভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আপনি দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন, বন্ধুদের সাথে মজা করতে পারেন, সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে পারে, বই পড়তে পারেন অথবা শারীরিক পরিশ্রমের কোন কাজ করতে পারেন। ঠিক সেই সময়গুলো অন্য সময়ে এবং অন্যের জীবনে ঢুকে যেতে পারলেই নিজের প্রতি এতোটা নির্দয় ও স্বার্থপর হওয়ার চিন্তা থেকে আপনি বেড়িয়ে আসতে পারবেন। শুধু অন্য কে না নিজেকে ভালবাসতে ও মূল্য দিতে শিখুন।

Tuesday, May 17, 2016

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ উপলক্ষে অর্জুন গীতার উপদেশাবলি প্রাপ্ত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন দুই পক্ষ রণক্ষেত্রে সুসজ্জিত, তখন অর্জুন দেখতে পায় উভয় দিকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে তার পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য, মাতুল, ভ্রাতা, পুত্র, পৌত্র, সখা প্রভৃতি সমস্ত আত্মীয়স্বজন। এই যুদ্ধ সংঘটিত হলে তার বংশ বিনাশ ছাড়া আর অন্য কিছু হবে না। তখন অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে বলে, 'বংশের কাউকে হত্যা করলে শাস্ত্র মতে কুলক্ষয় দোষ হয়। কুল ক্ষয় দোষে দোষী হলে কুল ধর্ম নষ্ট হয়, কুল ধর্ম নষ্ট করলে কুলের স্ত্রী গণ ব্যভিচারিণী হয়, কুলের স্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হলে বর্ণ সংকর হয়। কোন ব্যক্তি এই দোষে দোষী হইলে সে কুল নাশকারী হিসেবে সে সহ তার সমস্ত পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয়। আমি এই মহাপাপের অনুষ্ঠান করতে পারব না। এই গুরুতর অপরাধ করা থেকে ধৃতরাষ্ট্র যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাও আমার জন্য কল্যাণকর। আমি প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাব। আমার এই রাজ্যের দরকার নেই। আমি এই যুদ্ধ করতে পারবো না।'

নির্দয় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তখন তাকে অর্জুন কে বলে, 'তোমার বুদ্ধি কম, শাস্ত্রের কথা বোঝার মত তোমার মেধা পরিপক্ব হয়নি। পণ্ডিত ব্যক্তি কি জীবিত কি মৃত কোন ব্যক্তির জন্যই পরিতাপ করে না। আর জীবের আত্মাই হল সব। আত্মা আগুনে পুড়ে না, জলে ভেজে না। আত্মা অবিনশ্বর। এর ক্ষয় নাই বিনাশ নাই। যে মনে করে জীবাত্মাকে বিনাশ করা যায় তিনি অনভিজ্ঞ। জীবিত ব্যক্তির মৃত আর মৃত ব্যক্তির জন্ম অপরিহার্য। অতএব তুমি শোক করা বাদ দিয়ে অত্যন্ত আনন্দ সহকারে জ্ঞাতিবর্গকে সমূলে হত্যা কর। এতে কেবল শরীর নষ্ট হবে আত্মার কিছু হবে না।'

শ্রী অর্জুনকে আরও বলে,'তুমি এমন মহারথী হয়ে যদি যুদ্ধ না করো তবে তুমি অন্য সকলের দ্বারা তিরস্কৃত হবে। তোমার মত ব্যক্তির তিরস্কৃত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। তাছাড়া তুমি যুদ্ধে জিতলে তুমি পৃথিবী উপভোগ করবে আর হারলেও তোমার জন্য স্বর্গ নিশ্চিত। দুই দিকেই তোমার লাভ। অতএব এই যুদ্ধ তুমি কর। করলেই তোমার জন্য লাভ আর লাভ। জয় পরাজয়ের কথা না ভেবে একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাওয়াই কর্তব্য''। 'পুরুষ কর্মানুষ্ঠান না করলে জ্ঞান প্রাপ্ত হয় না এবং জ্ঞান প্রাপ্ত না হলে কেবল সন্ন্যাস দ্বারা সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। '

কৃষ্ণ আরও বলে, ''প্রথমে বিষয়চিন্তা, চিন্তা হতে আসক্তি, আসক্তি হতে অভিলাষ, অভিলাষ হতে ক্রোধ, ক্রোধ হতে মোহ, মোহ হতে স্মৃতিভ্রংশ, স্মৃতিভ্রংশ হতে বুদ্ধিনাশ, বুদ্ধিনাশ হইতে বিনাশ উপস্থিত হয়। 'পুরুষ আসক্তি পরিত্যাগ করে কর্মানুষ্ঠান করলে মোক্ষ লাভ করেন।' তুমি লোকদিগের ধর্মরক্ষণার্থ কর্মানুষ্ঠান কর।'

যদিও এখানে বিষয় চিন্তা মোহ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে তবুও শ্রী কৃষ্ণ নিজেই অন্য জায়গায় অর্জুন কে স্বর্গের লোভ এবং রাজ্যের লোভ দেখিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলেছেন। গীতার এক জায়গায় বলা হয়েছে লোভ ত্যাগের কথা আরেকবার দেখানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লোভ। এটা নিঃসন্দেহে শ্রী কৃষ্ণের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। অপরদিকে যদি ধর্মরক্ষার্থেই যুদ্ধ করার কথা কৃষ্ণ বলে থাকে, তবে কুল ধর্ম বিনষ্ট করলে ধর্ম নষ্ট হবে সেটা আগেই বলা হয়েছে। এরপর ও যদি যুদ্ধ করতে হয় তবে অর্জুন স্বর্গপ্রাপ্ত হতে পারে না। কারণ কেউ কুল বিনষ্ট ধর্ম নষ্ট হয়, আর ধর্ম নষ্ট হলে কিভাবে পুর্বপুরুষ সহ নরক প্রাপ্ত হয় তা উপরে বলা হয়েছে।

এইসকল যুক্তি দেখে পড়ে বুঝে হিন্দু উপাসকেরা নিষ্ঠুর নির্দয় শ্রী কৃষ্ণের মত ভগবান কে উদার, দয়াবান, শ্রেষ্ঠ জানতে বা মানতে বা বলতে তারা পিছপা হয় না। এইসব উপদেশ শ্রবণ করে সম্পত্তির জন্য হিন্দু উপাসকেরা পিতৃ হত্যা, বংশ নির্মূল করার মত গর্হিত কাজের মধ্যেও মহত্বতা খুঁজে পান। ধর্ম যুদ্ধ বা ধর্ম রক্ষার্থে বিভিন্ন অজুহাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হলেও, মূলত এই যুদ্ধটা ছিল অর্থ রক্ষা রাজ্য রক্ষা আর বিষয়াদি রক্ষার যুদ্ধ।

Thursday, May 5, 2016

ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বিভিন্ন কার্যকলাপ অনুসারে তার ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। যেমন, মধু নামক দানবকে সংহার করার জন্য তার নাম মধুসুধন, গাভী ও ইন্দ্রিয়গুলোকে আনন্দ দান করেন বলে তার নাম গোবিন্দ, বসুদেবের পুত্ররূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলে তার নাম বাসুদেব, দেবকীর সন্তানরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন বলে তার নাম দেবকীনন্দন, বৃন্দাবনে যশোদার সন্তানরূপে তিনি তার বাল্যলীলা প্রদর্শন করেন বলে তার নাম যশোদানন্দন এবং সখা অর্জুনের রথের সারথি হয়েছিলেন বলে তার নাম পার্থসারথি। সেই রকম, কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে অর্জুনকে পরিচালনা করেছিলেন বলে তার নাম হৃষীকেশ।
সমস্ত জীবের ইন্দ্রিয় এবং মনের নিয়ন্তা হইলেন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। শয়নে স্বপনে জাগরণে ভক্ত ভগবানের নাম স্মরণ করলেই ভগবান সন্তুষ্ট হোন। জীবেরা হচ্ছে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই জীবদের ইন্দ্রিয়গুলি ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমস্ত জীবের অন্তরে অবস্থান করে ভগবান তার ইন্দ্রিয়গুলি পরিচালিত করেন।তবে এটা নির্ভর করে আত্মসমর্পণের উপর। শুদ্ধ ভক্তের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়গুলি ভগবান প্রত্যক্ষভাবে পরিচালিত করেন। ভগবানের ভক্ত অর্জুন এক মুহূর্তের জন্যও শ্রী কৃষ্ণ কে স্মরণ থেকে বিস্মৃত হতেন না। একারণেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি অর্জুনের ইন্দ্রিয়কে নিজে পরিচালনা করেছিলেন।
কিন্তু এখন কথা হলো, এই যে বাংলাদেশে মুসলিমদের দ্বারা ভগবান ভক্ত হিন্দুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হতে হতে শূন্যের কোঠায় পৌঁছচ্ছে, কোথায় এখন কৃষ্ণের সেই রুদ্রমূর্তি? কোথায় কৃষ্ণের লীলাখেলা? নাকি তার সমস্ত দৈবশক্তি সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল, বর্তমানের জন্য না? এর দুইটা কারণ হতে পারে। এক বাংলাদেশের হিন্দুরা তাদের জপ যজ্ঞ পূজা প্রার্থনা দ্বারা হয় কৃষ্ণকে খুশি করতে পারে নাই; মানে তারা সহি কৃষ্ণ প্রেমিক হইতে পারে নাই। আর না হলে কৃষ্ণ এতদিনে তার সমস্ত রবোটিক পাওয়ার নিয়ে মরে ভুত হয়ে গেছে। যে কারণে তার কোন রকম ক্রিয়াকলাপ আমরা বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি না। তাই যারা এখনো 'হরে কৃষ্ণ' জপে জপে মুখে ফেনা তুলেছেন আসলে তা 'হরে ভুত' বলে ভগবানের দরবারে জমা হচ্ছে।
'হরে কৃষ্ণ' থুক্কু 'হরে ভুত'।
খইসিলাম সরকারের মুকে আমি মুতি। এরফরে অনেকেই খাঁড়ায় মুতার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন মেশিন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন খাড়ায়া কেমনে মুতা যায়। এরা ধরেই নিয়েছে মুতা মানেই খাড়ায়া মুতা, এবং এইটা যথেষ্ট গর্বের বিষয়। আমি সরকাররে শুয়াইয়া হেরফরে মুখের উপ্রে খাড়ায়া দুই পা দুই দিখে দিয়া বা বইসা যেমনে ইচ্ছা তেমনে মুতুম, এতে তোদের এত্তো সমস্যা কুতায় বুঝলাম না। মাইয়ারা খাড়ায়া মুততে ফারে না কইলো কিডাই? হেরা খাড়ায়া শুইয়া বইসা যেমনে ইসসা তেমনে মুঠবো, টেনশনটা যেন ফুরষদের হেইসব মুত ফরিশকার করতে হইবো! আগেও দেখেছি পোলাগোর রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে খাড়ায়া মুতা নিয়ে খুব শেয়ানা ফিল করে। আইচ্ছা খাড়ায়া মুতা কি গর্বের বিষয়? যদি হয় তাইলে কুত্তাও খাড়ায়া মুততে ফারে। কুত্তারেও আন্তর্জাতিক ভাবে একঠ্যাংগে খাড়ায়া মুতার জন্য এওয়ার্ড দেওয়া দরকার। ভাই সাপেরা আফনারা এক ঠ্যাংগে না, কুত্তার সাথে জিততে হলে দুই ঠ্যাংগ উঠায়া মুইত্তা দেখান। তাইলেই বুঝবাম আফনেরা জিইতা গেছেন।
ভিন্ন প্রসঙ্গঃ খাড়ায়া মুতা গর্বের বিষয় হইলে, তোদের গালের জংলী বাল ফাল মাইয়াগোর মত ক্লিন সেইভ হইতে যাওয়া অত্যন্ত লইজ্জ্যার বিষয়। আরো লইজ্জ্যার বিষয় হইলো নিজেগোড় বুখের মইধ্যে মাইয়াগোড় মত ইস্তন বাইনাইতে পারলি আজ পর্যন্ত। কুনু একটা বাইচ্চা জন্ম দিতে ফারলি না একজনও, তোরা একটা খাড়ানোড় বাচ্চাও কুনু মানুষরে দুধ খাওয়াইয়া আইজ ফর্যন্ত বাছায়া রাখতে ফারলি না । আরো আরো আরো লইজ্জার বিষয় হইলো নিজেগোর ইমানদন্ড টা আরো কয়েক ইঞ্চি বাড়াইয়া নিজের পিছন দিকে ঢুকাইয়া স্বাবলম্বী হইতে পারলি না। এর জন্য রাস্তা ঘাটে নারী, শিশু, বাচ্চা, মুরগী গরু যেইখানেই যার ফোঁটা পাস সেইখানেই বিসমিল্লা বইলা আল্লার নামে ঢুকায়া দেস, ছি কি লইজ্জা। কি লইজ্জা!
মাতৃত্ব আর ঋতুস্রাব এই নিয়ে অনেকরেই পুতুপুতু টাইপ শালপার্টি ঠ্যাটাচ দিতে দেখা যায়। অনেকই পিরিয়ড আর মাতৃত্বের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে এইটাকে ঐশ্বরিক পর্যায়ে নিয়ে সমবেদনা কামনা করে। যেমন মসজিদের পোলাপান আল্লার ঘরের জন্য সাহায্য ছায়। মেয়েরা মায়ের জাত এই বইলা পুরুষেরা নাকমুখচোখপানি সম্মান নারীকে দিয়ে থাকে, উচিত পাওনা দেওয়ার নামে ঠনঠন।
ঋতুস্রাব আর গর্ভধারণ এইটা শারীরিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রকৃতিগত ভবে এইটা নারী পাইছে। পুরুষ পাইলে পুরুষও সন্তান ধারণ করতে পারতো। পুরুষ সন্তান পয়দাকরতে পারে না বলে তার হীনমন্যতা বোধের কিছু নাই বা তার এতে অসম্মানের কিছু নাই। ঠিক তেমনই নারী পারে বলে তার গর্বের কিছু নাই বা সম্মানেরও কিছু নাই। যদি নারীরে সম্মান দিতে হয় তবে তার প্রাপ্য সম্মান দেন, নারীর সম্মান বিবেচিত হইবে তার কাজে। লুলা ল্যাংড়ার মত শরীরবৃত্তীয় সক্ষমতা আর অক্ষমতা দিয়ে মানুষের সম্মান বিবেচনা দেখলে আমার ঘেন্না লাগে।
যদি একান্তই ছান তবে নারীকে মানুষ হিসেবে দ্বিতীয় লিঙ্গ পরিচিতি বাদ দেন। তাকে তার প্রাপ্য ঠিক মত দেন। তাকে তার অধিকার দেন। তাকে বিবেচনা করুন তার কাজের ভিত্তিতে। মা হইতে পারে আর মাসিক হয় বলে নারীরে সম্মানের কিছু নাই। এইটা মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্তে নাম কইরা বেহেস্তে গিয়া সমস্ত সুবিধাদি যেমন পুরুষের, তেমনি জগতে নারীর মায়ের জাতি বইলা সমস্ত সুবিধাদি পুরুষের ভোগের মত নাকের আগায় একটা মুলা ঝুলানো ছাড়া অন্য কিছু না।
কাইল খইছিলাম, খাড়ায়া পেশাব যদি সম্মানের হয় তবে বাইচ্চা জন্মদান ও মেয়েদের জন্য সম্মানের। মানুষরে শরীরের উপাদান বা মাংস কম বেশি দিয়ে বিচার না কইরা কাজ দিয়ে মানুষ হিসেবে বিচার করতে শিখুন।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- 'চাতুর্বর্ণ্যং ময়াসৃষ্টম্' (গীতা,৪/১৩) - চার বর্ণের সৃষ্টি আমি করেছি।
এইখানে গুণের মাধ্যমে আমি কর্মকে আলাদা করেছি, 'গুণকর্ম বিভাগশ:' বলে যারা ত্যানা প্যাঁচাইতে আসবেন, তারা অনুগ্রহ করে বলিবেন কার কর্মগুণে অর্জুন ক্ষত্রিয় বর্ণে জন্মেছিল?
এখন আপনি বলতে পারেন, ভগবান কাকে কি রূপে পাঠায়, কাকে কোন বর্ণে জন্মদান করায় সেটা বুঝা ভার। এটা ভগবানের পরীক্ষা। ঠিক যেমন সোমালিয়ার খেতে না পাওয়া জীর্ণ শিশুটিকে দেখে আপনার মন ভগবানের প্রতি ভালবাসায় ভরে যায় এই ভেবে যে, তিনি আমাদেরকে তাদের থেকে কত ভাল রেখেছেন; সব ভগবানের কৃপা। আপনার মনে এই প্রশ্নটা কিন্তু আসে না, ভগবান কেন সৃষ্টিতে বৈষম্য তৈরি করেছেন? অথবা নেপালে ভুমিকম্প হলে আপনি ভগবানের প্রতি তুষ্ট থাকেন এই ভেবে যে, ভগবান আপনাকে কৃপা করেছেন। তেমনি আপনি নিচু জাতে জন্মালে আপনি ভাবেন ভগবানের পরীক্ষা, আর উঁচু জাতে জন্মালে ভগবানের কৃপা। একবার মনে প্রশ্ন আসে না, জাতপাতের তৈরি করে মানুষে মানুষে এই গণ্ডগোলের কি দরকার ছিল?
গীতার মত একটা মহাবর্ণবাদী গ্রন্থ উদার হয় কি করে?
আত্মা এক দেহ থেকে আরেক দেহে প্রতিস্থাপন হয়। আমাদের পোশাক পুরাতন হয়ে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে আমরা যেমন এক পোশাক ফেলে দিয়ে নতুন পোশাক পরি তেমনই আত্মা এক দেহ মরে গেলে অন্য দেহে প্রতিস্থাপন হয়। আত্মার এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পরে হিন্দু পাঁঠারা এসে শক্তির অবিনাশীতাবাদ সূত্র তুলে ধরে আত্মার দেহান্তর সত্য বুঝাতে চাচ্ছে। এইখানে আমরা একটু শক্তি কাকে বলে আর অবিনাশীতাবাদ সূত্রটা কি একটু দেখে নেই।
শক্তি কাকে বলে? পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কাজ করার পরিমানকে শক্তি বলে। কাজ বা কার্য হচ্ছে বল ও বলাভিমুখী সরণের গুণফল। কৃতকাজের পরিমাণ দিয়েই শক্তি পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বস্তুর শক্তি হচ্ছে ঐ বস্তু মোট যতখানি কাজ করতে পারে। যেমন আমি বিশ কেজির একটা বস্তা উঠাতে পারি আপনি পারেন না, আমি দশ ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, আপনি পারেন না । এখানে হলো আমার আপনার শক্তির পার্থক্য। আমরা যেমন সময় পরিমাপ করি সেকেন্ডে, দৈর্ঘ্য পরিমাপ করি মিটারে, কোন বস্তুর ভর মাপি কিলোগ্রামে, তেমনই শক্তি মাপার ও একক আছে তাকে বলে জুল। কোন বস্তুর শক্তি বেশি কোন বস্তুর কম। শক্তির আবার বিভিন্ন রূপ আছে যেমন যান্ত্রিক শক্তি, তড়িৎ শক্তি, আলোক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, সৌর শক্তি ইত্যাদি। যেমন পানি গরম করতে তাপ শক্তি লাগে, বিদ্যুৎ জ্বলাইতে আলোক শক্তি লাগে, গান গাইতে শব্দ শক্তি লাগে। এখন আপনি চাইলেই আলোক আর তাপ শক্তি দিয়ে গান গাইতে পারবেন না। শক্তি প্রাপ্ত হতে হলে যে প্রাণ থাকতে হবে এমনও কোন কথা নাই। গাড়ির ইঞ্জিন নিষ্প্রাণ হইলেও এতে শক্তি সঞ্চারিত হয়, ইস্ত্রি নিষ্প্রাণ হইলেও আমরা তাপের দ্বারা কাপড় সোজা করি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে শক্তির সাথে প্রাণ বা আত্মা, জীবন, মরণের কোন সম্পর্ক নেই। যে কোন জড় বস্তুও শক্তি প্রাপ্ত হতে পারে।
এখন দেখি অবিনাশীতাবাদ সূত্র কি? 'শক্তির সৃষ্টি কিংবা বিনাশ নেই। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট। এটাকে বলা হয় শক্তির নিত্যতা সূত্র।' যেমন আপনি প্যাডেলে পায়ে শক্তি প্রয়োগ করলে সাইকেল গতিশক্তি প্রাপ্ত হবে, আপনি সুইচ টিপলে বিদ্যুৎ শক্তি আলোক শক্তিতে মানে লাইট জ্বলবে, আপনি চুলা জ্বলালে রান্না হবে, এক্ষেত্রে তাপ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এইভাবে সাধারণ এক শক্তি আরেক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পদার্থ বিজ্ঞানের মতে শক্তি সৃষ্টিও হয় না আবার ধ্বংস ও হয় না, এক প্রকার শক্তি অন্য প্রকারে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
এখন আসি আত্মার প্রসঙ্গে। যদিও বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত আত্মার নামক কোন কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পায় নাই, তবুও গীতার আত্মা আর পরমাত্মা তত্ত্ব শক্তির অবিনাশীতাবাদ সূত্রের মানে বিজ্ঞান খুঁজে পেয়েছে। আত্মা যদি শক্তির আরেক নাম হয় তবে আমার শক্তি বেশি পিঁপড়ার শক্তি কম। আমি মরে গেলে আমার আত্মা কি পিঁপড়াতে যাবে নাকি পিঁপড়ার আত্মাটা নব্য কোন মানুষের শরীরে যাবে? যদি গিয়েই থাকে তবে একটা মানুষ পিঁপড়ার শক্তি দিয়ে করবে কি? আর একটা পুঁটি মাছের শক্তি দিয়ে হাতি কি করবে? পিঁপড়ার আত্মা আর মানুষের আত্মা কি এক? মানুষের শক্তি আর মানুষের আত্মার পরিমাণ কি এক? আত্মাকে আমরা শক্তি দিয়ে মাপব কেন? যদি ধরে নেই আত্মা আর শক্তি এক জিনিস, মানে যদি আমরা শক্তি দিয়ে আত্মা পরিমাপ করি, তবে প্রাণী বিশেষে শক্তির তফাৎ হওয়ার কথা না। আমার আর পিঁপড়ার শক্তি এক থাকার কথা যেহেতু আত্মা মাপে শক্তি দ্বারা। নাকি প্রাণী অনুযায়ী আত্মার কম বেশি হয়ে থাকে? মানুষের আত্মা বেশি পিঁপড়ার আত্মা কম, এমন? বিজ্ঞান থেকে শক্তি ধার করে এনে আত্মার সাথে গোঁজামিল দিলে হিসাবে কমবেশি এবং গড়মিল হচ্ছে। শক্তি যেমন এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হয় তেমনে আত্মার পরিবর্তনের রূপ কি? সে যায় কোন মাধ্যম দিয়ে? সে কি ঠাণ্ডা হয়ে, গরম হয়ে, আলোর মত ঝলকানি দিয়ে যায়? সে কিভাবেই বা যাতায়াত করে? আত্মার রূপ কি? আত্মার পরিমাপ করে কিভাবে? সর্বোপরি আত্মা মাপা হয় কোন এককের ভিত্তিতে?
তিন ছেলের পর মেয়ে জন্মানোয় বাবা মা বড্ড খুশি হয়েছিল। আদর করে নাম রেখেছিল অঞ্জলি। বাবা মা, ভাইদের কাছে একমাত্র আদরের ছোট বোন অঞ্জলি যাইই দাবী করতো তাই পেয়ে যেত। বলেতে গেলে সবাই মেয়েটিকে রাজকন্যার আদরে বড় করতে লাগলো । সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। একটু বড় হতেই, মানে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় থেকে মেয়ের বিয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রস্তাব আসতে থাকলো। অঞ্জলির কথা ছিল আগে পড়ালেখা শেষ করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, এরপর ভেবে দেখবে। এরমধ্যে অনেক ভাল ভাল বিয়ের প্রস্তাবই মেয়েটির পরিবার ফিরিয়ে দিয়েছিল। পড়ালেখা শেষের পরপরই বাসা থেকে চাপ আসতে থাকলো বিয়ের। মেয়েটি সরাসরি জানিয়ে দিলো যে, সে বিয়ে প্রথায় বিশ্বাসী না। বিয়ে করা তার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না। যদি কারো সাথে থাকতে হয় তবে এমনিতেই বসবাস করতে পারে, এর জন্য বিয়ের মত চুক্তির দরকার হয় না। এর পেছনে তার যুক্তি ছিল, মতের অমিল হলে সম্পর্ক ভাঙ্গবেই, সেটা বিয়ে করলেও যা হবে- না করলেও তা হবে। বিয়ে ছাড়াও একসাথে বসবাস করা যায়। বিয়ে নামক চুক্তি দ্বারা ভালবাসা জিইয়ে রাখা যায় না। অঞ্জলির আরেকটি দাবী ছিল, বিয়ে করে তাকে তার বাড়ি ত্যাগ করতে হবে, এটা সে করতে পারবে না।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে তার বাবা মা আর তার ভাইদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু অঞ্জলি তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল স্পষ্ট। দিন যেতে থাকে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করেও তার কোন চাকরি মিলছিল না। ইতিমধ্যে আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় অঞ্জলীর এমন নীতিবিরুদ্ধ, প্রথাবিরুদ্ধ মতের কথা। রাস্তা ঘাটে আগে যেইসব ছেলে সমীহ করতো, তারাও ইয়ার্কি মারা শুরু করলো, এমনকি ছোট ছেলেরাও। ঘরে গ্রহণযোগ্যতা কমতে কমতে একেবারে অবাঞ্ছিতের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকল। একই বাবা মায়ের সন্তান হলেও তার বড় ভাই তখনো বিয়ে না করেও তার অবস্থানের এক চুল হেরফের হল না, অঞ্জলির অবস্থানের হল। দিনের পর দিনে পরিবারের সকল সদস্যের সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। তার কোন প্রয়োজনেও বাবা ভাই মা তাকে সাড়া দেয়াটা ছিল গলগ্রহের মত, অঞ্জলির দ্বারা এদের সাথে নিঃশ্বাস নেয়াটাও কষ্টের হয়ে উঠলো। মাঝে মাঝে মনে হতে লাগলো দু'চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই চলে যাবে। যাই যাই করে আর তার যাওয়াটা আর হওয়াটা হয়ে উঠে না।
অঞ্জলি দুটো ছাত্র বাড়িতে পড়িয়ে যে টাকা পায় তা দিয়ে সে প্রতিমাসে কিছু বই কিনে। তার সময় কাটতো বই পড়ে, মাঝে মাঝে নিজেও কিছু লিখেটিখে, সেটা একান্তই নিজের মত করে, নিজের জন্যই, নিজের চিন্তা দর্শন হাবিঝাবি। কেউ জানে না তার মনের ভেতর কেমন উথাল পাতাল ভাঙ্গন চলতে থাকে। রাতের ঘুম কমতে থাকে, সাথে কমতে থাকে দিনের স্বচ্ছতা। মধ্যরাতের ট্রেনের বাঁশীর শব্দটা তাকে বরাবরই মাতাল করতো। সে রাতে তার মনে হলো, সমাজে বিয়ে ছাড়া যেহেতু নারী জন্মের কোন মানে নাই, তারও এই জীবন বাঁচিয়ে রাখার আর কোন মানে নাই। ট্রেন আসার শব্দ শুনতে শুনতে ঘরে থেকে সজ্ঞানে বের হয়ে সোজা বাঁশীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।
রেলের রাস্তায় পরদিন সকালে তার মরা, কাটা, চ্যাপ্টে যাওয়া দেহটা পাওয়া গেলো। অঞ্জলির আর বিয়ে করা হলো না। যদিও অঞ্জলি বিয়ে না করলে কোন ছেলের জীবন জলাঞ্জলি যেত না; তবুও সে মরে গেলো। অঞ্জলির বিয়ে হলো না ঠিকই কিন্তু একটা কিছু হলো, তা হলো-পরিবারের সদস্যরা মেয়ের পালনের ভার বহন করা থেকে চিরতরে মুক্তি পেলো।
(যথা সম্ভব আবেগ বর্জন করে লেখার চেস্টা।)