Tuesday, March 7, 2017

'আগে কাননবালারা আসতো পতিতালয় থেকে,
এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।'
--হুমায়ূন আজাদ
এখন--
'আগে পতিতালয়ে আসতো রাজা মহারাজারা
এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকেরা।'
'আগে পতিতারা যেতো রাজা মহারাজাদের কাছে,
এখন যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের কাছে।'
পতিতা, কানবালারা খ্রাপ, খ্রাপ, খ্রাপ। রাজা, মহারাজা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্ররা ভাল, ভাল, ভাল।
পুরুষ নিয়ে জেনারালাইজেশন করতে গিয়ে যারা ভাল পুরুষ, তারা মর্মে মর্মে আহত হোন, তারা তখন জেনারালাইজেশনের চিপায় আটকে মারা পরে যান, সেই সাথে তারা নারীবাদ বিষয়টার উপর বিরক্তও হয়ে যান। এতে কিন্তু আলটিমেটলি নারীবাদেরই ক্ষতি হয়! যুদ্ধের ময়দানে সঙ্গী সাথীরা একলা ফেলে মুখ ঘুরিয়ে নেন।
আচ্ছা সেসকল বীর পুরুষেরা কি আদৌ নারীবাদী? নাকি দয়াপরবশত হয়ে নারীবাদী সাজছেন? থ্রেট দিলাম--পুলুশ নিয়ে উলতা পালতা কিছু বল্লে আল নারীবাদ সাপোর্ট কলে দয়া কলব না কিন্তু হুম!
(দ্রঃ ভাল পুরুষ = যারা নারীবাদ সাপোর্ট করেন। তাহলে যারা সাপোর্ট করেন না তারা কি খ্রাপ পুরুষ?)
একদিন কোন এক মোহময় ক্ষণে
প্রান্তরের বুকে সবুজ কচি নরম ঘাস হবে।
জেনে রেখো প্রিয়--
ফড়িঙ হওয়ার আদিম ইচ্ছাটা আমার
সেদিনও আগের মতোই নতুন ছিল।
একটা সময় ছিল যখন আমি ঘুমের মধ্যেও নিজের ওড়না ঠিক করতাম। বুক, পিঠ, পেট, সহ নিতম্বের পুরোটা ঢাকা না থাকলে ঘুমের মধ্যেও হাত চলে যেতো ওড়না ঠিক করার জন্য। ঘরে পরিচিত অপরিচিত সবার সামনে ওড়না পরা বাধ্যতামূলক জ্ঞান করতাম। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি ওড়না না পরলে বা এভাবে না জড়ালে আমাকে ফ্যামিলি থেকে টর্চার করতো। কিন্তু বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে মাথায় গেঁথে গিয়েছিল যে, মেয়েদেরকে এভাবে চলতে হয়, মেয়েদেরকে এভাবেই ঢেকে ঢুকে থাকতে হয়। আমার বরাবরই সমাজের চোখে ভালোর হওয়ার দিকে লোভ ছিল। স্কুলে পড়ার সময় স্কার্ফ মাথায় দিতাম, রেগুলার নামাজ ও পড়তাম। এর যতোটা না আল্লার ভয়ে তার চেয়ে বেশি সমাজের অন্যান্য মানুষদের কাছ থেকে ''ভাল মেয়ে'' উপাধি পাওয়ার লোভে। আরেকটু বড় হওয়ার পর একবার প্রেমিকের সাথে বসে চা স্টলে বসে চা খাচ্ছিলাম। সেসময় দুই হাত উঁচু করে মাথার চুল বেঁধেছিলাম। এরপর সে আমাকে বুঝালো, ''লোকজনের সামনে দুই হাত এভাবে উপরে তুললে সাইড থেকে বুক দেখা যায়।'' মানে লোকের নজর বুকে আসে। সুতরাং যদিও এই কাজ একান্ত করতেই হয় তবে বুকের ওড়না যথাস্থানে রেখে করতে হবে। সেই প্রথম আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সমাজ ওড়নাটা অলিখিতভাবে বাধ্যতামূলক করেছে আমার জন্য। আমার বাবা মায়ের ওড়না শার্ট প্যান্টে এসব নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না, ওদের সামনে আমাকে ওড়না না ইউজ করতে হলেও; ভাই ভাবী বা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের সামনে ওড়নাটা জরুরী ছিল।
এরপর অনি আমাকে প্রথম বুঝিয়েছিল ওড়নার প্রয়োজনটা আসলে কোথাও নেই। এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে তোষামোদ করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমার রূপান্তরের পেছনে ওর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। নিউমার্কেটে লোকের সামনে সেন্ডু গেঞ্জি পরে গ্যাঞ্জি ট্রায়েল দিয়েছি। হাত উপরে তোলাতে পেট দেখা যাচ্ছিল। ও বলল, ''পেট আমারও আছে তোমারও আছে, পেট নিয়ে সংকোচের কিছু নেই। আর যদি সুন্দর পেট দেখে লোকে তাকিয়েই থাকে, তো থাকুক। এতে কোন সমস্যা দেখছি না। আমি খালি গা হয়ে ট্রায়েল দিতে পারলে তোমার ওটুকুতে এতো দ্বিধা কেন?'' প্রথম বুঝেছিলাম, প্রকৃতির সৌন্দর্য লোকে সহজভাবে নিলেও শরীরের সৌন্দর্যটাকে নিতে পারে না। বিশেষ করে মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তখন প্রথম অনুধাবন করেছিলাম, আপনা মাসে হরিনা বৈরী। মেয়েদের নিজের শরীরের মাংসই নিজেরদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। মানুষ এর পরও নিজেকে সভ্য দাবী করে! সেই থেকে শুরু, আর পেছনে ফিরিনি।
ওড়না নামক এই বাড়তি কাপড়ের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। শরীর ঢাকার জন্য যদি কাপড় পরতে হয় তা শাড়ি, টিশার্ট, শার্ট যে কোন বস্ত্র দিয়েই ঢাকা সম্ভব। এর উপরে আলাদা এক ফালি কাপড় জড়ানো মানে নিজেকে খাদ্যবস্তু করে উপস্থাপন করা। স্থানভেদে পোশাকের তারতম্য হয়, একেক দেশে একেক ধরনের পোশাক সমাদৃত। পোশাক পরিধান যার যার নিজের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার। কিন্তু তা যখন অবধারিত ভাবে পরতে বাধ্য করা হয় তখন সেটা হয়ে উঠে অত্যাচার, সেটা অন্যায়। শাসক শ্রেণীর প্রয়োগকৃত নিয়মের মত আমাদের দেশের মেয়েরা সেলোয়ার কামিজের সাথে ওড়না পরতে বাধ্য হয়। সচেতনভাবে বা অসচেতনভাবে তারা সারাদিন রাত ওড়না ঠিক করতে থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ অহেতুক কাজ করে চলছে মেয়েরা, কি অদ্ভুত কাণ্ড! প্রযুক্তির যুগে মানুষ দিনকে দিন আধুনিক হচ্ছে, ভাল মন্দ বুঝতে শিখছে। আমার মনে হয় সময় এসেছে ওড়নার মত অবাঞ্ছিত কাপড় ছুড়ে ফেলার।