পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ জিতেছে, দেশের মানুষের বাঁধভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার। স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে ফেবু সয়লাব।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যত কথা লোকে বলছে সেগুলো কি পাকিদেরকে ভালবাসার কারণে লাভস্পিচ, নাকি ওগুলো হেইটস্পিচ? হেইটস্পিচ লোকে তখনি বলে, যখন সেই বিষয়ে ঘৃণা প্রদানের মত যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ থাকে।
আমি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিপক্ষে কথা বললেই রব উঠে, আমার বাক্য পুরুষবিদ্বেষী এবং সেগুলো স্পষ্ট হেইটস্পিচ।
এইবার অল্প করে দেখে নেই পুরুষেরা নারীর সাথে কি কি করেছে এবং করছে---
১৪৮০ থেকে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে পুরো ইউরোপ জুড়ে ডাইনী সন্দেহে প্রায় ১২,০০০ নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সতীদাহ প্রথা্র নাম করে ১৮১৫ থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত তের বছরে শুধুমাত্র বাংলায় ৮১৩৫ জন নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।বৌদ্ধ ধর্ম বলে- 'নারীরা অস্পৃশ্য ও সকল প্রকার অনিষ্টের মূল, পুরুষদের নির্বাণ লাভের পথে নারী প্রধান অন্তরায়, নারী সঙ্গ অবশ্যই পরিত্যাজ্য'। হিন্দু ধর্ম অনুসারে 'নারী নরকের দ্বার'। বাইবেল বলে, 'Root of all evil-সমস্ত অহিতের মূল।' ইসলাম ধর্মে-'পুরুষ নারীর কর্তা,কারণ আল্লাহ তাদের কে এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন'।
পিতৃতন্ত্র, পারিবারিক অধিকার বঞ্চিত করে স্বামীর বাড়ি প্রেরণ, সন্তান জন্মদান না করাতে পারলে নারীর জীবন ব্যর্থতায় ভুষিত করণ, সন্তান লালন পালন ও জন্মদানকে জীবনের মুখ্য কর্ম হিসেবে ধরে সমস্ত মানব জীবন একই কাজ করে একই আঙ্গিনায় বন্দীত্বকরণ, পর্দার পাশাপাশি পোশাক পরিচ্ছেদে বাধ্যবাধকতা, ফেরার সময়ে-চলনে-বলনে-স্বরে-বচনে-দৃষ্টিতে-শরীরে-ঘরে-বাইরে সমস্ত ক্ষেত্রে সীমারেখা প্রদান, বেশ্যাবৃত্তি টিকিয়ে রাখা, নারীকে সকল ক্ষেত্রে পণ্যের মত ব্যবহার, সম্পত্তি বঞ্চিত করণ, মানবাধিকার হরণ, দ্বিতীয় লিঙ্গ বানিয়ে অধিকার হরণ, বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক অত্যাচার নির্যাতন ও শারীরিক আঘাত প্রধান, নারী ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, কণ্যা শিশু ধর্ষণ, স্ত্রী ধর্ষণ, নারী ও কণ্যা শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের নামে নির্যাতন, যৌতুকের কারণে নারী হত্যা, দাসী সঙ্গম, কণ্যা সন্তানের ভ্রূণ হত্যা, কণ্যা সন্তান হত্যা, অবৈধ সম্পর্কের নামে এবরশান, সতীত্বের নামে ফাইজলামী, পারিবারের নিকটাত্মীয় পুরুষদের দ্বারা যৌন হয়রানী, ইভ টিজিং, ধর্মে আইন করে পুরুষের বহুবিবাহ বৈধতা প্রদান করে নারীর সম্মানহানী , নারীকে মানুষ হিসবে অবমূল্যায়ন, নারীর উপর পুরুষের কর্তীত্ব ও খবরদারী, নারীর উপর পরিবার রাষ্ট্র সমাজের নজরদারী, ধর্মের মাধ্যমে পুরুষের থেকে নিম্নশ্রেণীর প্রাণী হিসেবে বিবেচনাকরণ, সংরক্ষীত কোটার নাম করে লোক দেখানো অধিকার প্রধান---আমাদের এই সমাজের পুরুষেরা এরকম অজস্র অন্যায় আচরণ নারীর সাথে করে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে।
এর পরও আমার বাক্যে যদি কোন ঘৃণা নির্গত না হয়, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিপরীতে কথা বলতে গেলে আমার বাক্য যদি পুরুষের জন্য হেইটস্পিচ না হয়, তবে আমার আর বাংলাদেশের পাকিপ্রেমী ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে কোন তফাৎ থাকবে না।
No comments:
Post a Comment