বিয়ে' হল নারীকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে চুরমার করে দাবিয়ে রাখার জন্য প্রধান এবং একমাত্র অস্ত্র। যতদিন বিয়ে প্রথা থাকবে ততদিন নারী থাকবে অন্যের হস্তগত পরাধীন খেলনার মত।বুদ্ধি হওয়ার আগে থেকেই একটা মেয়ে শিশুকে বিভিন্নভাবে স্বামীর বাড়ির উপযুক্ত করার জন্য গড়ে তোলা হয়।একটা মেয়ে নিজেকে বিভিন্নভাবে তৈরির মাধ্যমে তার মন মানসিকতাকে উৎসর্গ করে অন্যের বাড়ি যাওয়ার জন্য। বিপরীত-ক্রমে একজন ছেলে বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই অন্যের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তাকে কি কি করতে হবে সেভাবে সে নিজেকে গড়ে তুলে। একজন মেয়ে বড় হয় নিজেকে অন্যের হাতে সঁপে দিয়ে নির্ভার হওয়ার জন্য, আর একজন ছেলে বড় হয় অন্যের ভার গ্রহণ করে নিজের আধিপত্যের দলিল পাওয়ার জন্য । এই একটামাত্র কারণে মায়ের গর্ভে সন্তান ধারণের পরও সন্তান পরিচিত হয় পিতার নামে।
শুধু এই বিষয়টিই নয়, বিয়ের মাধ্যমে নারীকে তার শেকড় ছাড়তে বাধ্য করাসহ করা হয় বিভিন্নভাবে সম্পত্তি বঞ্চিত এবং মানবাধিকার বঞ্চিত। বাবা অথবা স্বামী দুই বাড়িতেই তারা থাকে অবাঞ্ছিত খড়কুটোর মত। কোন বাড়িই তার নিজের বাড়ি নয়। এমনকি তার নামও তার নিজের নাম নয়। একজন মেয়ের যোগ্যতা নির্ধারিত হয় তার স্বামীর বৈষয়িক সম্পত্তি পরিমাণের উপর। যেই মেয়ের স্বামী যত বেশি ধনী সেই মেয়ের কপাল ততো ভাল বলে বিবেচনা করা হয়। সেইসাথে বুদ্ধির ধারণের পর থেকেই চলে নিজেকে স্বামীর কাছে উৎকৃষ্ট খাদ্যবস্তু করে তোলে ধরার জন্য রূপচর্চার ব্যবহার। একজন ছেলে যেই সময় ব্যয় করে বিজ্ঞান দর্শন শিল্প সাহিত্য রাজনীতি অর্থনীতি সহ বিভিন্ন জটিল জটিল বিষয় জানার পেছনে, একজন মেয়ে সেই সময় ব্যয় করে নিজের পোশাক চুল গহনা ও সাজগোজ করে অন্যের চোখে সুন্দর উপমা পাওয়ার পেছনে। ছেলেরা রাজ্যের কাজ শেষ করে ঘরে ফিরে সুন্দরী বউয়ের কাছে যায়, আনন্দ উপভোগের জন্যে-প্রশান্তির খোঁজে। তাদের কাছে কাজটাই মুখ্য, স্ত্রী হল এন্টারটেইনমেন্ট এর উপাদান মাত্র, গৌণ। একজন মেয়ের ঘরের কাজ থাকে স্বামী কেন্দ্রিক, স্বামী নিয়ন্ত্রিত বিষয়, সংসার-রান্না, সন্তান লালন, যার শেষে তাকে অপেক্ষা করতে হয় স্বামীর আগমনের। মেয়েদের সংসারের কাজ গৌণ, স্বামীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ মুখ্য। যদিও কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা চাকুরী করে থাকে কিন্তু সেই অর্থও ব্যয় করে স্বামী সংসারের জন্য, অফিস শেষে সংসারের দায়িত্ব একনিষ্ঠ ভাবে পালন করে যায় ক্লান্ত হাতে।
স্বামী ও স্বামীর বাড়ির পূর্ণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারলেই একজন মেয়ে একজন উৎকৃষ্ট স্ত্রী হতে পারে, একজন উৎকৃষ্ট স্ত্রী পারে একজন উৎকৃষ্ট মা হতে, একজন উৎকৃষ্ট স্ত্রী এবং মা-ই পায় সারাজীবন সুখের নামে অসুখে আক্রান্ত হয়ে অন্যের ঘাড়ে খেয়ে পরে জীবন পার করার মত করুণা। মেয়েদের প্রতিভা সহ সমস্ত সৃষ্টিশীলতা ধ্বংস করার জন্য বিয়ে নামক এই একটি চুক্তিই যথেষ্ট। বিয়ে সংসার স্বামী সন্তানের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করতে করতে সে তার নিজের ব্যক্তি-পরিচয় ও নিজস্বতা সহ সেইসব বোধ কোথায় হাড়িয়ে ফেলে তা সে নিজেই তা জানে না। সে বেঁচে থেকে থেকে হয়ে উঠে জীবনের বিভিন্ন স্টেজে অন্যের হাতের দানের গুটি ও খেলার পুতুল। তার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে ধর্মের নামে ঈশ্বরের নাম করে পুরুষ কর্তৃক প্রদত্ত বিয়ে নামক আইন। যতদিন বিয়ের নামে নারীকে জব্দ করার জন্য এই অশ্লীল কুট-আইনটি বহাল থাকবে, ততদিন নারী জাতির মুক্তির সব আশায় গুড়ে-বালি।
No comments:
Post a Comment