Thursday, May 26, 2016

ভগবত গীতা, তৃতীয় অধ্যায়ঃ শ্লোক-১৩
যজ্ঞশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘ্নগ পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাৎ।।
অনবাদঃ ভগবদ্ভভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারণ তারা যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহণ করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে তারা কেবলই পাপই ভোজন করে।
যেইসকল ভক্ত কৃষ্ণভাবনামৃত পান করেছে তাদেরকে সন্ত বলে। সন্তরা সর্বদা ভগবানের প্রেমে মগ্ন। তারা ভগবানকে অর্পণ না করে কোনও কিছুই গ্রহণ করেন না। আর যারা ভগবানকে অর্পণ করা ছাড়া আত্মতৃপ্তির জন্য নানা রকমের খাবার খায়, শাস্ত্রে তাদেরকে চোর বলা হয় এবং সেই খাদ্যের প্রতি গ্রাসে গ্রাসে তারা পাপও খেয়ে থাকে। এজন্য পাপ-মুক্ত হতে হলে সংকীর্তন যজ্ঞ করার শিক্ষা নিতে বলা হয়েছে। সমস্বরে বলেন --- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
অর্থাৎ আপনি যদি বৈধ উপায়েও টাকা উপার্জন করে ভগবানকে অর্পণ না করে কোন খাদ্য খান, তবে আপনার খাবারের প্রতি গ্রাসে পাপ ভক্ষণ করবেন, এবং আপনি চোর বলে গণ্য হবেন।
লন্ডনের বার্মিংহামে বাংলার মেলা হচ্ছে। পরিবারের সকল সদস্য মিলে সেই মেলার গুজাতীয় সঙ্গীত উপভোগ করতে করতে মা মেয়েকে বলছে, ''জানো লন্ডনে নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছে, মুসলিম। যদিও পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত তবুও এটাই লন্ডনের প্রথম মুসলমান মেয়র।'' মুসলিমরা আসলে মুসলিম খোঁজে যেমন শোওরে খোঁজে কচু। এরা বিধর্মীদের দেশে থেকে এদের দেশের টাকায় দেশে বিদেশে টাকার পাহাড় গড়ে মনে মনে এইসব দেশের সর্বক্ষেত্রেই মুসলিম দেখতে চায়। পারলে পুরো ইউরোপটাকে এরা মুসলমান বানিয়ে ফেলে, হোক পাকিস্তানি, হোক মরোক্কি, হোক আরবী বা হোক বাঙ্গালী। মুসলমান তাদের প্রায়রটির প্রথমে ।
ইউরোপে যে বাংলা চ্যানেলগুলো চলে, সেগুলো সাহেব বিবি গোলামের বাক্সের চেয়েও নিম্নমানের গোলাম। এই চ্যানেলগুলোতে মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার খবর যেমন সাথে সাথে প্রকাশ করে, তেমনি বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার খবর প্রচার করে তিন দিন পর, তাও দায়সারা নামেমাত্র।
এরা মেয়র নির্বাচনের খবর প্রচার করছে মহা উল্লাসে। সেই মেয়রের প্রশংসা করে এবং 'উনার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পেছনে পাকিস্তান বা কোন মুসলিম উম্মাহর বা ইসলামের কোন কৃতিত্ব নেই, এতে পাকি মুসলিমদের এতো উচ্ছ্বাসের কিছু নেই, তিনি মেয়র হয়েছেন উনার নিজের যোগ্যতায়। তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক, তিনি পাকিস্তানি নন' এরকম মন্তব্য করার জন্য গতকাল রাতে পাকিস্তানী এক ব্লগার খুররাম জাকিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এ খবর তারা প্রকাশ করনি, করবেও না। সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, রাষ্ট্র সহ রাষ্ট্রের একেকটা মুসলিম যেন একেকটা জলজ্যান্ত খুনি বা খুনির সমর্থক। আমি সেই মা মেয়েকে ব্লগারের কথা বলতে গিয়েও বলিনি, কারণ পাছে আবার আমার মাথা না যায়!
আচ্ছা এই যে পাকি মুমিনরা চাপাতি ব্যবহার না করে গুলি করে ব্লগার হত্যা করছে। এটা কি ইসলাম মতে সহি সম্মত হইছে? আমাদের দেশি মুমিনরা কি বলেন?
সবাই খালি রেফারেন্স চায়। রেফারেন্স এর বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আমি যদি বলি, আজ সিনেপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। লোকে সাথে সাথেই বলবে- আপনি যে মিথ্যে বলছেন না তার প্রমাণ কি? প্রমাণ সরূপ তারিখসহ আমাকে টিকিটের ছবি পোষ্ট দিতে হবে। সাধারণত নাস্তিকেরা সবসময় রেফারেন্স সাথে রেখে কিছু পোষ্ট করার চেষ্টা করে, তা না হলে মুমিনদের কাছে মিথ্যেবাদী সাজতে হবে। আপনি যদি বলেন- এই হাদিসটা তিরমিযি থেকে নেওয়া, তখন ওরা চাবে কত নাম্বারে আছে? নাম্বার দেখালে বলবে- বই এর পৃষ্ঠার ছবি দেন। পৃষ্ঠার ছবি দিলে বলবে- এইটা সহি হাদিস গ্রন্থ না, সহি হাদিস গ্রন্থ প্রমাণ করলে বললে- এই অনুবাদে ভুল আছে। অনুবাদ ঠিক আছে দেখাইলে বলবে- ইংরেজি অনুবাদ দেখুন, ইংরেজিও ঠিক আছে দেখালে বলবে- আরবিটাই সবচেয়ে সহি। আরবিটা সহি কেন? নবী কইছে।
মুমিনরা সারাক্ষণ রেফারেন্স দিয়ে সত্যতা প্রমাণ করতে চায়। একমাত্র আল্লার ক্ষেত্রে তাদের কাছে রেফারেন্স চাইলে বলবে আল্লা আছে এইটা নবী বইলা গেছে। নবী কইত্তে আল্লারে পাইল? আল্লায় কইছে? আল্লা কইত্তে আইল? নবী কইছে। নবী কইত্তে আল্লারে পাইল? আল্লায় কইছে? আল্লা কইত্তে আইল? নবী কইছে...!
ছবি কই? অনুবাদ কই? ছবি আর অনুবাদ না দেখালে কেমনে সহি হয় ভাউ, আপনি যে মিথ্যে বলছেন না তার প্রমাণ কি?
১) ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এমপির উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে সাজা। যদিও শিক্ষক বলেছেন তিনি এই ধরনের কিছু বলেন নাই, তবুও এমপির কোন নিকট আত্মীয়ের এই পোষ্টে নিয়োগদান কনফার্ম।
২) টিএসসির টয়লেটে আপত্তিকর অবস্থায় প্রেমিক-প্রেমিকা আটক। তারা যদি বিয়ে করে তাহলে কোনও মামলা দেয়া হবে না। অন্যথায় মামলা দেয়া হবে। ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেওয়া যেই দেশের মানুষেরা নৈতিক মনে করে, তাদের কাছে প্রেমিক প্রেমিকা খুবই লজ্জার বিষয়। শুনছি মোহাম্মদ ১৪ জনরে বিয়া কইরা লাগাইতেন, তাতে আয়েশাকে ধর্ষণও বৈধ হয়ে যায়। সবার উপরে লাগানো সত্য, তবে তা নিশ্চয়ই বিয়ের পর। যৌন-দাসী আর গণিমতের মালের হিসাব আলাদা।
৩) গ সেটের উত্তরমালা দিয়ে খ সেটের প্রশ্ন বিবেচনা করে এই যে বরিশাল বোর্ডে হিন্দু ধর্মের শিক্ষার্থীদের ফেল দেখাইছে এবং একারণে যেইসব স্টুডেন্ট আত্মহত্যা করেছে এর দায় সম্পুর্ণভাবে ইহুদী নাসারাদের।
৪) বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার কয়েকঘন্টার মধ্যেই সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এই হত্যার সাথে ভিক্ষুর স্বজনরাই জড়িত। তবে রাতে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন স্বজন জড়িত থাকার কথাটি তাঁর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখটা তার শরীর থেকে একটা বিচ্ছিন্ন অঙ্গ। কেউ কিছু মনে কইরেন না।
৫) আরেকটা খবর দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দিলে আর রেহাই নেই-র‍্যাব মহাপরিচালক। ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা সহ সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করে তারে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে ব্লগার ও ফেবু ইউজাররা। এইজন্য সরকার দশ কোটি নিয়ে নামছে, আমাদের মত চুনোপুঁটিদের ধরতে। ব্লগার ফেবু ইউজারদের কতোল করে, থানায় নিয়ে ইসলামের কালো অধ্যায় মুছে ফেলা যাবে না। দশ কোটি কেন সহস্র কোটি নিয়া নামলেও শেকাছিনার মৌলবাদ মদদদাতা সহ খুনি পোষণকারী এইডা মিথ্যা হয়ে যাবে না। কারণ ফেবুকাররা কেউ সফী হুগুরের পা ধুয়ে পানি খায় না।
৬) জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা প্রতিবন্ধী : তারানা হালিম। কুত্তারে নিয়া গালি দিলে, বা ইসলামের প্রধান শত্রু ইহুদী নাসারা কইলে যেমন কুত্তা বা ইহুদী নাসারাদের কিছু যায় আসে না, তেমনি জঙ্গিদের প্রতিবন্ধী কইলে তাদের কিছু যায় আসবে না। কারণ প্রতিবন্ধীদের আমাদের দেশে মন্ত্রী এমপি প্রধানমন্ত্রীদের মত জঙ্গিদের বাঁচিয়ে ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে হয় না।
৭) জয় বাংলা(বলতে চাইলে)।
(আগে তোর) কুত্তা সামলা।
নব্বই এর দশকে তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে তোলপাড়, লক্ষ্য লক্ষ্য লোকের মিছিল মিটিং, অবরোধ, ফতোয়া জারী, মাথার মূল্য নির্ধারণ, পত্রিকায় দিনের পর দিন হাজারো লেখালেখি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আলোচনা সমালোচনা, হাইডিং, দেশত্যাগ এগুলা তসলিমা নাসরিনের আগে কার জন্য এমন তুমুল ভাবে হয়েছিল বাংলায়? তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি ছিল? নারীবাদ চর্চা নাকি নাস্তিক্যবাদের নামে ইসলাম ধর্ম বিরোধী কথা বলার কারণে? ঠিক কোন কারণে সে দেশে থাকতে পারেনি, কোন কারণে তাকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল? তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগে আদালতে মামলা উঠেছিল, গ্রেফতারি পরোয়ানা হয়েছিল? সেগুলো আমরা কেউ কি জানি নাকি জানি না? অথবা জানলেও না জানার ভান করে অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাই?
কেউ সহজে মুক্তচিন্তার আন্দোলনের কাজে তসলিমা নাসরিনের নামটা বা অবদানের কথাটা মুখে নিতে চায় না। নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলা কি মুক্তচিন্তার মধ্যে পরে না? নাস্তিকতাবাদ কি নারী মুক্তির বাইরের কিছু? হুমায়ুন আজাদ নারী নামক গ্রন্থ, যে বইটির বেশিরভাগ অংশই বিশ্বের অন্যান্য নারীবাদী লেখক, দার্শনিক এবং কবি, সাহিত্যিকদের নারী বিষয়ক আলোচনা সমালোচনামূলক সঙ্কলন বলা যেতে পারে। এছাড়া আরজ আলী আর আহমদ শরীফ নারী মুক্তির জন্য কি বলেছেন? কোথায় বলেছেন? নারী মুক্তি ছাড়া নাস্তিকতার চর্চা আদৌ কি কি সুফল বয়ে আনতে পারে? যদি আনতে পারে সেগুলো কি কি? যদি না আনতে পারে তবে এসব ক্ষেত্রে নারীবাদীদের অবদান স্বীকৃতি পায় না কেন?
তসলিমা নাসরিনের বাংলাদেশে থাকার সময়ে তাঁর চেয়ে হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ আর আরজ আলী মাতুব্বর কতোটা জনপ্রিয় ছিল? প্রথম কোন লেখকের লেখা হটাত উঠা ঘূর্ণিঝড়ের মত আন্দোলিত করে ভাঙ্গন ধরিয়েছিল ধর্মান্ধ কুসংরাচ্ছন্ন নারীবিরোধী বাঙ্গালি সমাজে ? বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার আন্দোলনে তসলিমা নাসরিনের অবদান কতটুকু? প্রান্তিক পর্যায়ে এসব বিষয়ে প্রথম কার নাম লোকের মুখে উঠে?
আজ ব্লগারদের মুক্তবুদ্ধির চর্চার কারণে মরতে হচ্ছে, দেশ ছাড়তে হচ্ছে। তাদেরও দেশে ঢোকার পারমিশন আছে। তসলিমা নাসরিনের নেই কেন? তসলিমা নারসিন দেশকে টেনে নিয়ে কোন চুলোতে ঢুকিয়েছেন? এতে কার কোন অঙ্গ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে? ঠিক কোন কারণে তাকে একটা গণতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? আমরা যারা নাস্তিক্যবাদ প্রচার করি বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি সমস্তই ধার্মিক পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নোংরা রাজনীতির দিকেই আঙ্গুল তোলে। ব্লগার বলেন কবি বলেন আর সাহিত্যিক যারাই এসব বিষয়ের বিরুদ্ধে লেখেন তাদের বেশিরভাগ অংশটাই পুরুষ। তারা নাস্তিক্যবাদ পছন্দ করেন কিন্তু পুরুষ-তন্ত্র বা ডিরেকটলি পুরুষের বিরুদ্ধে কথা বলাটা তারা খুব একটা পছন্দ করেন না; তাদের সংজ্ঞায় ঠিক শালীনতার পর্যায়ে পরে না। একজন নারী হয়ে পুরুষের প্রকাশ্য বা লুকায়িত সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে এভাবে লেখালেখিটা তাদের চোখে ধৃষ্টতা হিসেবই গণ্য। যে কারণে কোন ব্লগার, কবি, সাহিত্যিক, লেখক বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী কোন লেখার কথা-লেখকের কথা বলার সময় কেউই তসলিমা নাসরিনের নামটা মুখে নিতে চান না। সরকার, ধর্মান্ধ মৌলবাদী, পুরুষতান্ত্রিক সুশীল লেখক ব্লগার সবাই চায় তাঁর নামটা-তার ইতিহাসটা দেশ থেকে মুছে যাক। পারলে তারা দু কলম তাঁর বিরুদ্ধে লেখবে যাতে লোকে তাঁর সম্পর্কে ভুল তথ্য লালন করে, কিন্তু তাঁর অবদান, তাঁর স্বীকৃতি বা তাঁর পক্ষে কথা বলার জন্য তাদের কলমে কালি থাকে না, মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হয় না।
তসলিমা নাসরিন ইস্যুতে তারা নিজেরাই একেকজন সর্বেসর্বা। পারলে তারা মুক্তচিন্তা, নারীবাদ ও নাস্তিক্যবাদ প্রসারে পুরুষ লেখকদের অবদানের কথা জোরাল কণ্ঠে বলে দিবে। তসলিমা নাসরিন এসব বিষয়ে কিছু বলেননি, কিছু করেননি তাই তাঁর নাম বলা নিষিদ্ধ, তাকে নিয়ে দেশের কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি, যে কারণে পুরষ প্রথাবিরোধী লেখকের বই বাজারে প্রকাশের অনুমতি পেলেও, তসলিমা মত নারী লেখকের বই প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী বহাল থাকে। তাঁর নাম নেওয়া যেমন নিষেধ তাঁর বই প্রকাশ করা এবং বিক্রি করাও নিষেধ, তাঁর বই পড়া নিষেধ। অতএব তাঁর অবদান নিশ্চয়ই আকাশ থেকে পরবে না?
বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক লেখকেরা চায় তসলিমা নাসরিনের নামটা বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের মত এক অজানা গহ্বরে বিলীন করে দিতে, যাতে করে বাংলার নাস্তিক্যবাদ বা নারী জাগরণসহ সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষ লেখকদের অবদানটা নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করে, আর নারী লেখক তসলিমা নাসরিনের নামটা ধামাচাপা পরে অন্ধকারে অতলে অজানায় হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটা যত বেশি ঘটতে পারে ততোই তাদের জন্য মঙ্গল।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ উপলক্ষে অর্জুন গীতার উপদেশাবলি প্রাপ্ত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন দুই পক্ষ রণক্ষেত্রে সুসজ্জিত, তখন অর্জুন দেখতে পায় উভয় দিকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে তার পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য, মাতুল, ভ্রাতা, পুত্র, পৌত্র, সখা প্রভৃতি সমস্ত আত্মীয়স্বজন। এই যুদ্ধ সংঘটিত হলে তার বংশ বিনাশ ছাড়া আর অন্য কিছু হবে না। তখন অর্জুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে বলে, 'বংশের কাউকে হত্যা করলে শাস্ত্র মতে কুলক্ষয় দোষ হয়। কুল ক্ষয় দোষে দোষী হলে কুল ধর্ম নষ্ট হয়, কুল ধর্ম নষ্ট করলে কুলের স্ত্রী গণ ব্যভিচারিণী হয়, কুলের স্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হলে বর্ণ সংকর হয়। কোন ব্যক্তি এই দোষে দোষী হইলে সে কুল নাশকারী হিসেবে সে সহ তার সমস্ত পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয়। আমি এই মহাপাপের অনুষ্ঠান করতে পারব না। এই গুরুতর অপরাধ করা থেকে ধৃতরাষ্ট্র যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাও আমার জন্য কল্যাণকর। আমি প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাব। আমার এই রাজ্যের দরকার নেই। আমি এই যুদ্ধ করতে পারবো না।'
নির্দয় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তখন তাকে অর্জুন কে বলে, 'তোমার বুদ্ধি কম, শাস্ত্রের কথা বোঝার মত তোমার মেধা পরিপক্ব হয়নি। পণ্ডিত ব্যক্তি কি জীবিত কি মৃত কোন ব্যক্তির জন্যই পরিতাপ করে না। আর জীবের আত্মাই হল সব। আত্মা আগুনে পুড়ে না, জলে ভেজে না। আত্মা অবিনশ্বর। এর ক্ষয় নাই বিনাশ নাই। যে মনে করে জীবাত্মাকে বিনাশ করা যায় তিনি অনভিজ্ঞ। জীবিত ব্যক্তির মৃত আর মৃত ব্যক্তির জন্ম অপরিহার্য। অতএব তুমি শোক করা বাদ দিয়ে অত্যন্ত আনন্দ সহকারে জ্ঞাতিবর্গকে সমূলে হত্যা কর। এতে কেবল শরীর নষ্ট হবে আত্মার কিছু হবে না।'
শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে আরও বলে,'তুমি এমন মহারথী হয়ে যদি যুদ্ধ না করো তবে তুমি অন্য সকলের দ্বারা তিরস্কৃত হবে। তোমার মত ব্যক্তির তিরস্কৃত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। তাছাড়া তুমি যুদ্ধে জিতলে তুমি পৃথিবী উপভোগ করবে আর হারলেও তোমার জন্য স্বর্গ নিশ্চিত। দুই দিকেই তোমার লাভ। অতএব এই যুদ্ধ তুমি কর। করলেই তোমার জন্য লাভ আর লাভ। জয় পরাজয়ের কথা না ভেবে একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাওয়াই কর্তব্য''। 'পুরুষ কর্মানুষ্ঠান না করলে জ্ঞান প্রাপ্ত হয় না এবং জ্ঞান প্রাপ্ত না হলে কেবল সন্ন্যাস দ্বারা সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। '
কৃষ্ণ আরও বলে, ''প্রথমে বিষয়চিন্তা, চিন্তা হতে আসক্তি, আসক্তি হতে অভিলাষ, অভিলাষ হতে ক্রোধ, ক্রোধ হতে মোহ, মোহ হতে স্মৃতিভ্রংশ, স্মৃতিভ্রংশ হতে বুদ্ধিনাশ, বুদ্ধিনাশ হইতে বিনাশ উপস্থিত হয়। 'পুরুষ আসক্তি পরিত্যাগ করে কর্মানুষ্ঠান করলে মোক্ষ লাভ করেন।' তুমি লোকদিগের ধর্মরক্ষণার্থ কর্মানুষ্ঠান কর।'
যদিও এখানে বিষয় চিন্তা মোহ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে তবুও শ্রী কৃষ্ণ নিজেই অন্য জায়গায় অর্জুন কে স্বর্গের লোভ এবং রাজ্যের লোভ দেখিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলেছেন। গীতার এক জায়গায় বলা হয়েছে লোভ ত্যাগের কথা আরেকবার দেখানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লোভ। এটা নিঃসন্দেহে শ্রী কৃষ্ণের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। অপরদিকে যদি ধর্মরক্ষার্থেই যুদ্ধ করার কথা কৃষ্ণ বলে থাকে, তবে কুল ধর্ম বিনষ্ট করলে ধর্ম নষ্ট হবে সেটা আগেই বলা হয়েছে। এরপর ও যদি যুদ্ধ করতে হয় তবে অর্জুন স্বর্গপ্রাপ্ত হতে পারে না। কারণ কেউ কুল বিনষ্ট ধর্ম নষ্ট হয়, আর ধর্ম নষ্ট হলে কিভাবে পুর্বপুরুষ সহ নরক প্রাপ্ত হয় তা উপরে বলা হয়েছে।
এইসকল যুক্তি দেখে পড়ে বুঝে হিন্দু উপাসকেরা নিষ্ঠুর নির্দয় শ্রী কৃষ্ণের মত ভগবান কে উদার, দয়াবান, শ্রেষ্ঠ জানতে বা মানতে বা বলতে তারা পিছপা হয় না। এইসব উপদেশ শ্রবণ করে সম্পত্তির জন্য হিন্দু উপাসকেরা পিতৃকূল হত্যা, বংশ নির্মূল করার মত গর্হিত কাজের মধ্যেও মহত্বতা খুঁজে পান। ধর্ম যুদ্ধ বা ধর্ম রক্ষার্থে বিভিন্ন অজুহাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হলেও, মূলত এই যুদ্ধটা ছিল অর্থ রক্ষা রাজ্য রক্ষা আর বিষয়াদি রক্ষার যুদ্ধ।
তনুর জন্য তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল, ফলাফলে আমরা কিন্তু আশাবাদী  । শিক্ষকের জন্যও হচ্ছে, সবার জন্য হওয়া উচিত। কিন্তু ব্যাপার হলও আমাদের চেতনা আমরা একাত্তরে ঘুম পারাইয়া রাখছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা হটাত জেগে উঠে। কোথায় যে জাগে কোথায় যে জাগে না সেটা বুঝা দায়। শিক্ষক গুরু তিনি শ্রদ্ধার পাত্র, তার জন্য প্রতিবাদ করতে হয়। তাই সবাই ওসমান গুষ্টির আর লীগের বালের নাগাল না পেয়ে রবীন্দ্র নজরুল সহ নিজ নিজ কান ধরতেছি। কান ধারায় কিছু হোক আর না হোক, অভিনব একটা উৎসবমুখর প্রতিবাদ তো হচ্ছে। এইরকম সেলিব্রেটিরা কয়েকদিন গণজাগরণ মঞ্চেও এসে স্লোগান দিত, আমি দিতাম; সে কি তীব্র প্রতিবাদ।
কিন্তু এমন অনেক মা আছে যাদেরকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়। তখন এই জাতি মায়ের জন্য কাঁদতে পারে না। একজন শিক্ষিকা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনি কারোর মা এখনো হয়েছেন কিনা জানি না। তার জন্য আমরা কেউ কিন্তু নিজেদের চ্যাট ধরে প্রতিবাদ করিনি, কখনো করব এমন আশাও রাখি না। (অবশ্য ধর্ষণের জন্য মা লাগবে এমন কোন কথা নেই, শিশু বাচ্চা হলেও চলে। আমি শিক্ষক শ্রদ্ধার পাত্র, তাই মা আমাদের কেমন শ্রদ্ধার যোগ্য বুঝাইতেই মাকে টেনেছি। প্রতিদিন আমরা আর কিছু করি বা না করি, বিরোধ হলেই ধরে মাকে আগে ছুদে দেই।)। কারণ ধর্ষণ এই দেশে পানিভাত, কয়টা ধর্ষণ এবং পরবর্তী হত্যা বিচার পায়? আর পাইলেই কি ধর্ষণ উৎসব বন্ধ হয়? হয় না। এটা চলমান, আগেও চলেছিল, বর্তমানেও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। ধর্ষণের পর মেরে ফেলতে পারলে সেটা আরও সহি, কোন প্রমাণ রইলো না। মা মরলেই কি বেশ্যা মরলেই কি! ধর্ষণের প্রশ্নে হিন্দু মুসলিম আমরা সকলেই পুরুষ, সকলেই ভাই ভাই। অবশ্য বঙ্গদেশে বিধর্মী নারীদের ধর্ষণ করতে পারলে সাথে সোয়াবও ফ্রি।
ভালোর ভালো শিক্ষক মশাই এখনো এই দেশে বেঁচে আছেন। মরে গেলে হয়তো এই সত্যটাও বের হতো না যে, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগটা মিথ্যা ছিল। আর ইসলাম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মরলে বিচার পাওয়ার কেমন আশা থাকে সেটাতো আমাদের সবারই জানা।