১) ফেনীতে এক মেয়েকে হাত পা বেঁধে ধর্ষণ করেছে তার আপন বাবা। মেয়ের মা তার নিজের বাড়ি চলে যাওয়ার পর এ-ঘটনা ঘটিয়েছে তার বাবা।
২) শরীয়তপুরে এগারো বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করেছে তার ফুফাতো ভাই। মেয়েটির এক আত্মীয় মারা যাওয়ার পর সবাই জানাজায় অংশগ্রহণের সময় বাড়ি খালি পেয়ে মেয়েটিকে সে ধর্ষণ করে।
৩) ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে খালি বাড়িতে এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে ওই বাড়ির পাহারাদার। ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে এলাকার মাতব্বররা সহ স্থানীয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মেয়েটিকে পাপ-মুক্ত করতে তওবা পড়ায় এবং নাকে খত দিয়ে দোররা মারে। এর পাশাপাশি ধর্ষিতা হয়ে সে ‘অপরাধ করেছে’ মর্মে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়।
প্রথম খবরটা বেশ উদ্বেগজনক। আমি যখন ধর্ষণের জন্য পুরুষকে দোষারোপ করি তখন অনেকেই এসে অভিযোগ করেন,''আপনার বাবাও কি ধর্ষক?'' আমার বাবা আমাকে ধর্ষণ করেনি, তাই বলে আমার বাবা বা অন্যের বাবারা যে নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করে না, এটা সত্য নয়। এই ধরনের মানসিকতা লালন পালন করার মানে হলও তাদেরকে পূর্ণোদ্দমে ধর্ষণ করতে আরও উৎসাহিত করা। কারণ তখন বাবা ধর্ষকেরা এটা জেনে ধর্ষণ করে যে, সমাজে সে বাবার অবস্থানে আছে, আর বাবারা কখনো ধর্ষণের মত গর্হিত কাজ করতে পারে না, এটা সাধারণ জনতা মানে। এই সুযোগটাকে তারা কাজে লাগাতে পারে খুব সহজে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীর পোশাক ঠিক ছিল না একটা অজুহাত মাত্র। ধর্ষণের শিকার নারী যেমন বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, সে কি বাচ্চা নাকি বুড়া, সে কি নবজাতক নাকি মৃত এগুলা ফ্যাক্ট না; ধর্ষণের জন্য একটা ছিদ্র-ধারী নারী নামক প্রাণী হওয়াটাই ধর্ষকের জন্য যথেষ্ট। তেমনি ধর্ষক ব্যক্তি বাবা-দাদা, মোল্লা-পুরোহিত নাকি সন্ন্যাসী এটা কোন ফ্যাক্ট না, সে পুরুষ এটাই হলেই যথেষ্ট। বাবারা ধর্ষক হয় না এটা ধর্ষক রক্ষার একটা অজুহাত মাত্র।
দ্বিতীয় খবরে ধর্ষণের চেয়ে ছেলেটা জানাজায় অংশ না নিয়ে ধর্ষণ করেছে এই খবরটা প্রাধান্য পেয়েছে। জানাজায় অংশ গ্রহণ না করে ধর্ষণ করাটা যেন বিরাট কোন অপরাধ! ব্যাটা ধর্ষণ করেছিস ভাল কথা তাই বলে এমন একটা সময়ে? এজন্য লোকে খুব অবাক হচ্ছে। এরা খুব সহজ একটা হিসেব বুঝে না ধর্ষণ করার জন্য মন্দির, মসজিদ, গির্জা, নামাজ, রোজা, জানাজা এগুলো বিষয় না, এগুলো ধর্ষণ কমাতে পারে না। যে ধর্ষণ করতে ইচ্ছুক সে জানাজা কেন অন্য যেকোনো ধর্মীয়, পারিবারিক অনুষ্ঠানের সময় ধর্ষণ করতে পারে। পৃথিবীর বেশিরভাগ লোক কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাস করে এবং আস্তিক, ধর্ম মানুষকে খারাপ কাজ করা থেকে রোধ করতে পারলে জগতে আর কোন অপরাধ থাকতো না। বরং দেখা যায় ধর্মের ফাঁকে বিভিন্ন রকমভাবে অপরাধকে পাপ নাম দিয়ে পরিত্রাণ লাভের উপায় বলে দেওয়া হয়েছে। জানাজার সময় বা মসজিদে, মন্দিরে যদি ধর্ষণ সংঘটিত হয় তখন স্রষ্টার সেই অপরাধ রোধ করার ক্ষমতা থাকে না, কিন্তু পাপ মুক্তির উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য তিনি আছেন, তখন তিনি মহান হিসেবে বিবেচিত হন আমাদের কাছে।
তৃতীয় ঘটনাটা আমাদের দেশের নারীদের জন্য ভয়ংকর একটি বার্তা বহন করছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করার পরও মেয়েটিকে নাকে খত দিয়ে দোররা মারা হয়েছে ইসলামিক আইনে। মেয়েটিকে সাদা কাগজে লিখতে বাধ্য করানো হয়েছে সে অপরাধী। ইসলামিক আইনে ধর্ষণের শিকার নারীও জিনা করার অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকে। আমাকে কেউ জোর করে, হাত পা বেঁধে অথবা বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করলো, আর এর জন্য আমাকেই অপরাধী হতে হবে! এই হল ইসলামিক পবিত্র চুল ছেঁড়া বিধান!
ধর্মগুলো আমদেরকে এভাবে তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়! আমাদের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীরা এভাবেই উদার ধর্মের কথা বলে নৈতিক আদর্শে আদর্শগত হতে বলছেন? এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানেরা নারী-বিরোধী ধর্ম এবং ধর্মের আদর্শ লালন করতে যখন উৎসাহিত করেন, তখন বিষয়টা সে দেশের নারীদের জন্য খুব শঙ্কার ব্যাপার। সৌদির মত ইসলামিক রাষ্ট্রের জন্য সেটা ঠিক হলেও বাংলাদেশের জন্য তা প্রযোজ্য হতে পারে না। ইসলাম ধর্ম যখন এপ্লাই হয় তখন তার সবচেয়ে বেশি আক্রমণের বস্তু হয়ে উঠে নারী, তা আমরা ইসলামিক দেশগুলোতে দেখেছি ও দেখতে পাচ্ছি।
আমরা তবে কি সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি?
http://bangla.jagoroniya.com/mass-media/361/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%AE%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B
http://bangla.jagoroniya.com/mass-media/361/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%AE%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B
No comments:
Post a Comment